
বিমল চৌধুরী বরাকবাণী প্রতিনিধি শনবিল ১৩ জুলাইঃ নবগঠিত পাথারকান্দি বিধানসভা কেন্দ্রের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা কাজিরবাজার–পলডহর গ্রাম পঞ্চায়েত এখন কার্যত সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর এই জিপিতে যখন শপথ ও সভাপতিপদ নিয়ে রাজনৈতিক জটিলতা অব্যাহত, ঠিক তখনই বিস্ফোরক অভিযোগে কাঠগড়ায় দুই নির্বাচিত মহিলা সদস্যা— সাহানা বেগম (৮ নম্বর ওয়ার্ড) ও রাজিয়া বেগম (৯ নম্বর ওয়ার্ড)।
অভিযোগ উঠেছে, এই দুই সদস্যা ভুয়ো শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট জমা দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। এ নিয়ে গোটা গ্রাম পঞ্চায়েতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে, যারা সত্যিকারের পড়াশোনা করে পরিশ্রমের মাধ্যমে সার্টিফিকেট অর্জন করে, তাদের আত্মত্যাগের দাম কি এইভাবে ভুয়ো কাগজে হরণ করা যায়? গ্রামের একাংশের অভিযোগ, সাহানা বেগম ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে অসম সংস্কৃত বোর্ডের অধীনে ‘প্রবেশিকা’ পরীক্ষার যে সার্টিফিকেট হলফনামায় জমা দিয়েছেন, সেটি ভুয়ো।
তিনি দাবি করেছেন, কানাইলাল জিউ হাইস্কুল থেকে পরীক্ষায় বসেছিলেন। রোল নম্বর: ০২৪, নম্বর: ০১২২, ও সার্টিফিকেট ক্রমিক নম্বর: ১৮৪৯৩। কিন্তু সংস্কৃত বোর্ডের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে সর্বমোট উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১২,১৯৯ জন, অর্থাৎ ১৮৪৯৩ নম্বর কোনওভাবেই বৈধ নয়। উপরন্তু, তিনি ‘দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ’ বলে যেটা দাবি করেছেন, সেই তালিকায়ও তাঁর নাম নেই। গ্রামবাসীদের সোজাসাপ্টা অভিযোগ এই সার্টিফিকেট ভুয়ো, আর সেটা দিয়েই তিনি পঞ্চায়েতে পৌঁছেছেন।
৮ নম্বরের পর ৯ নম্বর ওয়ার্ড। এখানেও চিত্রটা প্রায় এক। প্রবীণ নাগরিকদের একাংশ জানিয়েছেন, রাজিয়া বেগম যে শিক্ষাগত যোগ্যতার হলফনামা জমা দিয়েছেন, তারও সত্যতা নিয়ে বড়সড় সন্দেহ রয়েছে। অভিযোগকারীদের বক্তব্য, তিনি হয়তো সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছেন টাকার বিনিময়ে, পড়াশোনার মাধ্যমে নয়। একজন প্রবীণ শিক্ষক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমরা যেসব ছাত্রছাত্রীদের কষ্ট করে পড়াই, তারা দিনরাত এক করে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে।
আজ দেখি, টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট জোগাড় করলেই জনপ্রতিনিধি হওয়া যায়! এটা সমাজের প্রতি প্রতারণা। এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগের পর পাথারকান্দি ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের পক্ষ থেকে দুই অভিযুক্ত সদস্যার নামে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছে, ১৪ জুলাই দুপুর ১২টার মধ্যে তাদের নিজ নিজ শিক্ষাগত যোগ্যতার আসল সার্টিফিকেটসহ ব্লক অফিসে হাজিরা দিতে হবে।
এই তলবকে ঘিরে গ্রামে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। রাজনৈতিক মহলও বিষয়টির দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যদি অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয়, তবে শুধু দুই সদস্যার সদস্যপদ বাতিলই নয়, গোটা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজনৈতিক ভারসাম্য আমূল বদলে যেতে পারে। তবে প্রশ্ন হল নির্বাচন কমিশন কীভাবে এই জাল নথি যাচাই না করেই মনোনয়নপত্র গ্রহণ করল? তদন্ত করে দোষ প্রমাণিত হলে কেবল সদস্যপদ বাতিল হবে, না কি ফৌজদারি মামলা করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে?