
বরাকবাণী প্রতিনিধি কচুদরম, ১৩ জুলাইঃ আসামের বিভিন্ন প্রান্তে রাজ্য সরকারের উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে একাধিকবার উত্তাল হয়েছে রাজনীতি। তবে এবার সরাসরি গণপ্রতিবাদে সরব হল সোনাই। বঞ্চিত, বাস্তুচ্যুত ও নিরীহ পরিবারগুলোর জন্য কোনও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই যে অমানবিকভাবে তাঁদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, সেই অভিযোগ তুলে সোমবার সোনাইয়ে দুই ঘণ্টার অবস্থান ধর্মঘটের আয়োজন করা হয়েছে।
শনিবার বিকেলে সোনাইয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রতিবাদ কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন আয়োজক সদস্যরা। জানানো হয়, সোনাই সার্কেল অফিসের সামনে সকাল ১০টা থেকে অবস্থান ধর্মঘট পালিত হবে এবং রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে একটি স্মারকলিপি পেশ করা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কাপ্তানপুর-কাজিডহর জেলা পরিষদ সদস্য সুফিয়ান লস্কর বলেন, সরকার যে উচ্ছেদ চালাচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অমানবিক ও অসাংবিধানিক। যাঁরা উচ্ছেদের শিকার, তাঁদের অধিকাংশই বছরের পর বছর ধরে সেই জমিতে বসবাস করছেন। কোন পুনর্বাসন ছাড়াই ঘরছাড়া করে দেওয়া হচ্ছে গরিব মানুষদের এটা কোনও সভ্য সরকারের পরিচয় নয়।
আসাম ওয়েসি ফ্যান্স ক্লাবের সভাপতি বাপন রাজ বড়ভুইয়া জানান, উচ্ছেদ অভিযান যেন এক রাজনৈতিক কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে ঘরছাড়া করা হচ্ছে। প্রশাসন আইনের নামে অন্যায় করছে। সোনাই ইউডিএফ কমিটির সম্পাদক সজীব লস্কর বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মাধ্যমে রাজ্যপালের কাছে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করবো।
এই রাজ্যে কি গরিবদের থাকার অধিকার নেই? সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সোনাই ইউডিএফ কমিটির সভাপতি খালিদ হাসান লস্কর, রাজনৈতিক কর্মী সেকন বড়ভুইয়া, সমাজকর্মী মেহবুব আলম লস্কর-সহ আরও অনেকে। তাঁরা একযোগে বলেন, এই উচ্ছেদ অভিযান জনবিরোধী এবং মানবতা বিরোধী। মানুষ ঘর হারাচ্ছে, পরিবার ভেঙে যাচ্ছে, অথচ সরকার নির্বিকার। এর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পথে রাস্তায় নামতেই হবে।
বর্তমান রাজ্য সরকার ভূমি উদ্ধারের নামে বহু পরিবারকে উচ্ছেদ করছে, কিন্তু বড় প্রশ্ন হল, পুনর্বাসন ছাড়া এই উচ্ছেদ কতটা ন্যায্য? সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের বাসস্থানের অধিকার রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বসবাস করা মানুষদের কোনও বিকল্প না দিয়েই উচ্ছেদ করা হলে তা শুধুমাত্র আইন নয়, মানবতাকেও উপহাস করে। রাজ্য সরকার দাবি করে এই উচ্ছেদ অভিযান অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে, কিন্তু বাস্তবে গরিব, দলিত, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকেই বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে, এমন অভিযোগ বিরোধীদের।