
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শারদীয় দুর্গোৎসব মানেই আনন্দ, আয়োজন আর মিলনমেলা। তবে এবারের উৎসব শুধু উল্লাসে সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে জুড়েছে কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধার আবহ। শহরের একদল সচেতন নাগরিকের আহ্বানে অম্বিকাপুর পূর্বপাড়া দূর্গাপূজা কমিটি এগিয়ে এসেছে এক অভিনব পদক্ষেপে—প্যান্ডেলে স্থান পেলেন দুই কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী অমর জুবিন গার্গ এবং বরাক উপত্যকার গর্ব কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য।
কয়েক সপ্তাহ আগে সামাজিক মাধ্যমে শিলচরের বিভিন্ন মহলের নাগরিকরা একত্রে আবেদন জানান—প্রতিটি পূজা প্যান্ডেলে যেন জুবিন গার্গ ও কালিকাপ্রসাদের প্রতিকৃতি রাখা হয়। তাঁদের যুক্তি, শিল্পীর দেহ চলে গেলেও শিল্পকর্ম তাঁকে যুগ যুগ ধরে অমর করে রাখে। এক তরুণ সমর্থক লিখেছেন, আমাদের উৎসবে আলো-সাজসজ্জা যেমন দরকার, তেমনি দরকার আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করা শিল্পীদের যথাযোগ্য সম্মান। আরেক প্রবীণ নাগরিকের মন্তব্য, “আগামী প্রজন্ম যদি পূজা প্যান্ডেলে তাঁদের ছবি দেখে, গান শোনে, তবে সহজেই বুঝতে পারবে আমাদের সঙ্গীতঋণ কতখানি।

এই আবেদনে সাড়া দিয়ে অম্বিকাপুর পূর্বপাড়া পূজা কমিটি এবার গড়ে তুলেছে এক নজির। প্যান্ডেলের প্রবেশমুখে শোভা পাচ্ছে দুই শিল্পীর প্রতিকৃতি। মৃদু সুরে বাজছে তাঁদের অমর গান-কখনও ভেসে আসছে জুবিনের জনপ্রিয় সুর, কখনও আবার কালিকাপ্রসাদের প্রেরণাদায়ক লোকসঙ্গীত। দর্শনার্থীরা শুধু দেবী দর্শনেই নয়, শিল্পীদের স্মরণেও ডুব দিচ্ছেন আবেগের স্রোতে। আবেদনকারীদের অন্যতম রাজু দাস জানান, শারদোৎসব বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। এই সময়ে যদি আমরা সমাজকে সমৃদ্ধ করা শিল্পীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে পারি, তার চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। আমরা চাই, শুধু পূর্বপাড়া নয়, সমগ্র শিলচরের পূজা কমিটিগুলো এই উদ্যোগকে গ্রহণ করুক।
তিনি আরও যোগ করেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ ইতিমধ্যেই সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁদের আশা, এই সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একদিন পুরো শহরের পূজা আয়োজনে শিল্পীদের স্মরণকে ঐতিহ্যে পরিণত করবে। সামাজিক মাধ্যমে যেমন তরুণ প্রজন্মের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ছে, তেমনি প্রবীণরাও প্রশংসা করছেন এই উদ্যোগের। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, শারদোৎসব কেবল উৎসবের আমেজ নয়, এটি সমাজ-সংস্কৃতির উত্তরাধিকার বহন করারও সঠিক সময়।
অম্বিকাপুর পূর্বপাড়ার ব্যতিক্রমী আয়োজন ইতিমধ্যেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সচেতন মহলের অভিমত, এর ফলে আগামী বছর থেকে শিলচরের অন্যান্য পূজা কমিটিও এ পথে হাঁটতে উৎসাহিত হবে। অমর জুবিন গার্গ তাঁর অগণিত জনপ্রিয় গানে ভারতের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। অন্যদিকে কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য তাঁর লোকসঙ্গীত আর ভাবনায় রেখে গেছেন এক অনন্য উত্তরাধিকার, যা নতুন প্রজন্মকে পথ দেখায়। তাঁদের এই সম্মিলিত স্মরণে এবারের শারদোৎসব যেন এক বিশেষ মাত্রা পেল।