পাক অধিকৃত কাশ্মীরে উত্তেজনা, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণহানি, সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২২

রোববার দুপুর থেকেই হিংসার আবহে প্রশাসন জরুরি পদক্ষেপ নেয়। একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ও ল্যান্ডলাইন পরিষেবা। মুহূর্তেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো অঞ্চল। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। সোমবার নীলম ব্রিজ থেকে মুসলিম কনফারেন্স নেতা রাজা সাকিব মজিদের নেতৃত্বে শুরু হয় এক ‘শান্তি সমাবেশ’। কিন্তু সেই সমাবেশের মাঝেই পরিস্থিতি হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, কোনও উস্কানি ছাড়াই শান্তি সমাবেশে অংশ নেওয়া একদল লোক জেকেজেএএসি (জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি)-র বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে গুলি চালায়।

গুলিতে প্রাণ হারান মহম্মদ সুধীর নামে ৩০ বছর বয়সি এক ব্যবসায়ী। তিনি স্থানীয়ভাবে ক্রোকারি দোকানের মালিক ছিলেন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তাঁর। আরেক দোকানদার গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয়দের দাবি, বিক্ষোভকারীরা মজিদের গাড়িবহরকে যেতে দেওয়ার জন্য রাস্তা ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সমাবেশে উপস্থিত মজিদের সমর্থকেরা গাড়ি থেকে নেমে বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালায়।

এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকাও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, শান্তি সমাবেশে উপস্থিত পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনী জেকেজেএএসি বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। ফলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় এবং সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার নেয়। পাক অধিকৃত কাশ্মীর জুড়ে এই বিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল মূলত ভর্তুকি মূল্যে আটা ও বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের চরিত্র পাল্টে যায়। এবার বিক্ষোভকারীদের সনদে যোগ হয়েছে আরও অনেক বড় দাবি, কাশ্মীরি অভিজাতদের জন্য বরাদ্দ বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহার, শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত বিধানসভা আসন বাতিল, বিনামূল্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা চালু করা, বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার, কর ছাড় ও একাধিক সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন। জেকেজেএএসি জানিয়েছে, দুই বছর আগে সরকারের সঙ্গে হওয়া চুক্তি এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। সেই চুক্তি ভঙ্গের প্রতিবাদেই নতুন করে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা এবার একটি বিস্তৃত ৩৮ দফা সনদ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে শরণার্থীদের চাকরির কোটা বাতিল, আটা-বিদ্যুতে ভর্তুকি, কর মওকুফ, বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের দাবি বিশেষভাবে আলোচিত। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, অভিজাত শ্রেণি দীর্ঘদিন ধরে একচেটিয়া সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে, অথচ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমশই সংকটময় হয়ে উঠছে।

রোববার সন্ধ্যায় মুজাফরাবাদের লাল চকে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সেখানে শওকত নওয়াজ মীর সহ একাধিক নেতা বক্তৃতা দেন। মীর ঘোষণা করেন, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় আরও বৃহৎ সমাবেশের জন্য জনতাকে একই স্থানে জড়ো হতে হবে। ফলে মঙ্গলবারও পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

এখন প্রশ্ন উঠছে, এই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অচলাবস্থার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দোকানপাট বন্ধ, বাজার অচল, যোগাযোগ ব্যবস্থা অকার্যকর—সব মিলিয়ে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা একেবারে থমকে গেছে। কোথাও ভয়ের আবহ, কোথাও আবার অজানা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন মানুষ। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের এই রক্তক্ষয়ী উত্তেজনা ক্রমশ জটিল আকার নিচ্ছে। প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্ত, অভিজাত শ্রেণির একচেটিয়া সুবিধা আর বিক্ষোভকারীদের বাড়তে থাকা দাবি—সব মিলিয়ে আগামিদিনে এই অঞ্চল আরও বড় সংঘাতের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

Related Posts

বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির বিরোধ চরমে, জুলাই আন্দোলনেও ভাঙন, সমাধানের আশায় জাতীয় নির্বাচনের দাবি জোরালো

তৌফিক আহমেদ তফছির,ঢাকা,২৪ মে: বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে নানা সময়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দেখা গেছে। যতই দিন যাচ্ছে, দ্বন্দ্ব যেন ক্রমশ…

ভারতের বন্দর দিয়ে আর ঢুকবে না বাংলাদেশি পোশাক-খাবার! নয়াদিল্লির কড়া বার্তা ঢাকার উদ্দেশে

বরাকবাণী প্রতিবেদন গুয়াহাটি ১৮ মেঃ ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্কে নয়া মোড়! এবার ভারতের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আর ঢুকতে পারবে না—সরাসরি নিষেধাজ্ঞা জারি করল মোদী সরকার। শনিবার কেন্দ্রীয় বাণিজ্য…