মিয়ানমারের ৪.৭ মাত্রার রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মণিপুর, নাগাল্যান্ড সহ আসাম, এখনো হতাহতের খবর নেই, আতঙ্কে বহু মানুষ

রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ধরা পড়ে ৪.৭। কেন্দ্রস্থল ছিল প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার। সেখান থেকে মণিপুরের উখরুল জেলা মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হওয়ায় ভারতের বহু স্থানে তার প্রভাব স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়েছে। মণিপুর, নাগাল্যান্ড, আসাম ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় কম্পন টের পান সাধারণ মানুষ। আতঙ্কে অনেকেই ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। তবে, সৌভাগ্যের বিষয়—এখনও পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

মিয়ানমারের ভেতরে হলেও কেন্দ্র ছিল ভারতের সীমান্তের একেবারে কাছে। এজন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে তার প্রভাব প্রবলভাবে ধরা পড়ে। মণিপুরের উখরুল, সেনাপতি, নাগাল্যান্ডের কোহিমা থেকে শুরু করে অসমের কাচাড়, হাইলাকান্দি, নগাঁও, শিলচর—প্রায় সর্বত্রই ভোরবেলায় মানুষ হালকা কাঁপুনি অনুভব করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভোরের সেই সময় হঠাৎ দরজা-জানালা কেঁপে ওঠে। ঘুম ভেঙে আতঙ্কে অনেকেই ছুটে বেরিয়ে আসেন। অনেকে আবার প্রার্থনা শুরু করেন। প্রায় ১০-১২ সেকেন্ড স্থায়ী হয় এই কম্পন।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মাত্র তিন দিন আগেই ভারতের আরেক প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। সেদিন রিখটার স্কেলে মাত্রা ধরা পড়েছিল ৩.৫। যদিও তুলনামূলকভাবে তা দুর্বল ছিল, তবুও ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্বের কিছু অংশে তার প্রভাব পড়ে। ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার।

কিছু মাস আগে মিয়ানমার ও ব্যাংককে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল সমগ্র এলাকা। সেদিন রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা পৌঁছেছিল ৭.৭-এ। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বহু মানুষের মৃত্যু হয়। জাতিসংঘ জানিয়েছিল, ওই ভূমিকম্পের প্রভাবে শুধু মানুষের প্রাণহানি বা সম্পদহানিই নয়, কৃষি উৎপাদনেও মারাত্মক প্রভাব পড়েছিল। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ এখনো সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারেননি।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর-পূর্ব ভারত ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। হিমালয় পর্বতমালার ভূ-প্রাকৃতিক চাপ এবং মিয়ানমার-ইন্দো-বর্মা অঞ্চলের ভূত্বক ক্রিয়াকলাপের কারণে এখানে মাঝেমধ্যেই কম্পন অনুভূত হয়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এ ধরনের মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প বড় বিপর্যয়ের পূর্বাভাসও হতে পারে। তাই সতর্ক থাকা জরুরি।

মণিপুর ও নাগাল্যান্ড প্রশাসন ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জেলা পর্যায়ে নির্দেশ জারি করেছে। স্থানীয় পুলিশ ও দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর প্রস্তুত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর না পাওয়া গেলেও সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অসমের শিলচরের এক গৃহবধূ জানান, ভোরে আচমকা খাট কেঁপে উঠতে শুরু করে। আমরা সবাই দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। কয়েক মুহূর্ত মনে হয়েছিল, এবার হয়তো ভয়ঙ্কর কিছু হবে। অনুরূপ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের বাসিন্দারাও।

একদিকে বাংলাদেশ, অন্যদিকে মিয়ানমার—প্রতিবেশী দেশ দু’টিতেই টানা ভূমিকম্পের ঘটনা চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ বারবার আতঙ্কের মুখে পড়ছেন। সৌভাগ্যের বিষয়, মঙ্গলবারের ভূমিকম্পে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অঞ্চলে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। তাই সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও সচেতন থাকা প্রয়োজন।

Related Posts

শিলচর ডিসি অফিসে বাবু সিণ্ডিকেটের চাঁই সৌমিত্র নাথ ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার…

শারদোৎসবে দুই কিংবদন্তি শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধার অর্ঘ্য শিলচরে

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শারদীয় দুর্গোৎসব মানেই আনন্দ, আয়োজন আর মিলনমেলা। তবে এবারের উৎসব শুধু উল্লাসে সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে জুড়েছে কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধার আবহ। শহরের একদল সচেতন নাগরিকের…