
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ১৮ মেঃ ভাষার দাবিতে আর যেন কোনও জাতিগোষ্ঠী বা মানুষকে জীবন দিতে না হয়, সেই কামনাই জানালেন অসম সাহিত্য সভার সভাপতি বসন্তকুমার গোস্বামী। তাঁর মতে, শুধুমাত্র অসম নয়, গোটা পৃথিবীতে ভাষার জন্য কারোর রক্ত ঝরুক, এমনটা কখনওই চায় না অসম সাহিত্য সভা। বরং ভাষা এবং সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে মানবিক একতা ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের দিকেই এগিয়ে চলার বার্তা দিলেন তিনি।
‘বরাক-ব্রহ্মপুত্রের মহামিলনের বর্ণিল অস্থায় সেতুবন্ধন যাত্রা’র অংশ হিসেবে তিন দিনের সফরে বরাক উপত্যকায় এসেছেন অসম সাহিত্য সভার সভাপতি সহ প্রায় ১৫ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। সফরের মূল লক্ষ্য, বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ভাষিক সেতুবন্ধন গড়ে তোলা। এই সফরে তাঁরা করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ও কাছাড় জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও ভাষা শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বরাক সফরে এসে বসন্ত গোস্বামী বলেন, বরাক উপত্যকার ভাষা শহীদদের আত্মার সদগতি হোক। কিন্তু পৃথিবীতে ভাষার দাবিতে আর কেউ যেন প্রাণ না হারান, সেই পরিবেশ গড়ে তোলা আমাদের সকলের দায়িত্ব। মানুষের মধ্যে বৈষম্য নয়, মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও চর্চাই হওয়া উচিত জাতিগত অগ্রগতির মাপকাঠি।
এই সফর থেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন তিনি। জানানো হয়, সেপ্টেম্বর মাসে বরাক উপত্যকায় অনুষ্ঠিত হবে অসম সাহিত্য সভার মধ্যকালীন অধিবেশন। এই অধিবেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকছে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদও। একই মাসে গীতিকবি ভূপেন হাজারিকার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মহা-উৎসবের আয়োজন করা হবে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধুমাত্র অসম নয়, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে এই অনুষ্ঠানে।
বসন্ত গোস্বামী আরও বলেন, বরাক উপত্যকার দীর্ঘদিনের দাবি—শিলচর রেলওয়ে স্টেশনকে ‘ভাষা শহীদ স্টেশন’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার—সেই দাবির প্রতি অসম সাহিত্য সভা পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে। এই সমর্থন এই সফরকে শুধু প্রতীকী নয়, বাস্তবিক সমন্বয়ের বার্তা বহনকারী করে তুলেছে।
বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার ভাষিক, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের এই সাহিত্যমূলক যাত্রা শুধু দুই অঞ্চলের নয়, সমগ্র ভারতের মানুষের কাছে একতার বার্তা নিয়ে আসছে। আর সেই বার্তাই পৌঁছে দিলেন বসন্ত গোস্বামী ভাষা হোক অহিংস চেতনার বাহক, জীবন নয় তার মূল্য।