
বরাকবাণী প্রতিবেদন শ্রীভুমি, ২৬ জুলাইঃ শহরের বুকে ফের চললো বুলডোজারের গর্জন। প্রশাসনের নির্দেশে আজ সকালে ব্রজেন্দ্র রোডে ঝড়ের গতিতে শুরু হলো উচ্ছেদ অভিযান। পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক প্রীতম শর্মার নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী সহ হাজির হয় পুর কর্তৃপক্ষ। আর শুরু হলো বহু বছরের দোকান গৃহ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ। জেসিবি মেশিনের এক এক কুড়ালেই মাটির সাথে মিশে গেলো ৮ থেকে ১০টি দোকান ও ছোট ছোট বসতঘর।
সেইসঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা একাধিক বাড়ির বেআইনি দেয়াল। দায়সারা ভাবে দেয়া এক সরকারি নোটিশকে সামনে রেখে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও প্রশাসনের এই আচমকা বুলডোজার-নীতি ঘিরে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্রজেন্দ্র রোডে দীর্ঘদিন ধরে নালার উপর অবৈধ দোকানপাট নির্মিত হওয়ার ফলে শহরের জলনিকাশি ব্যবস্থা কার্যত বিকল হয়ে পড়ে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই এই এলাকাসহ শহরের বিস্তীর্ণ অংশে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। সেই কারণেই নাকি এ অভিযান।
তবে প্রশ্ন উঠছে, এই অবৈধ নির্মাণ কি গতকাল গড়ে উঠেছে? নাকি একাধিক বছর ধরে বেড়ে ওঠা এই দখলদারিত্ব প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে হরদম চলেছে? স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও কিছু ঘুষখোর আধিকারিকের মদতে এই অবৈধ দোকানপাট ও বাড়ির দেয়াল গড়ে ওঠে। বছরের পর বছর ধরে এই নির্মাণে চোখ বুজে ছিল প্রশাসন। অথচ এখন ভোট চলে গেলে, শহরের গরিব ও মাঝারি শ্রেণির ব্যবসায়ীদের ঘর গুঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে পুরসভা।
এই উচ্ছেদ অভিযানে প্রশাসন যে একেবারে নির্বাচনী নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সরকারি জমিতে দেয়াল তুলে গড়ে ওঠা বাড়ির একটির মালিক স্বয়ং মিলু দেব, যিনি পেশায় এক পুলিশকর্মী। আরেকজন, রাজু ঘোষ প্রশাসনিক মহলে যার নাম এক পরিচিত মুখ। তাদের বাড়ির দেয়ালও আজ গুঁড়িয়ে দেয় প্রশাসন, তবে অভিযোগ উঠছে, একাধিক বড় দখলদার এখনো রয়ে গেছেন প্রশাসনের ছত্রছায়ায়। উচ্ছেদ অভিযান যতটা না শহর রক্ষার প্রয়াস, তার চেয়ে অনেক বেশি একটি কর্তব্যপরায়ণতার নাটক যেখানে টার্গেট মূলত নিম্নবিত্ত, প্রভাবহীন সাধারণ মানুষ।
যাদের দোকান ঘর আজ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো, তাদের কী হবে? নেই কোনো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, নেই বিকল্প দোকান ঘরের বন্দোবস্ত। কয়েকজন অসহায় দোকানদার চোখের জলে বলেন, আমার সংসার চলত এই দোকান থেকে। আগেই যদি পুরসভা একটু সতর্ক করতো, আমি নিজেই গুছিয়ে নিতাম। এখন সব ভেঙে দিলো, আমি কোথায় যাবো? এক বৃদ্ধ মহিলা যিনি ফুটপাথে চা বিক্রি করতেন, ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেন, মহাশয়, বড়লোকদের কিছু হয় না। গরিবের সব চেপে ধরছে।
আমার বাড়ির সামনে দেওয়াল গড়ে কারা সেটা দেখে না, কিন্তু আমার চায়ের ঠেলা ভেঙে দিলো। কই, নোটিশ তো পাইনি! সত্যি কি প্রশাসনের উদ্দেশ্য শুধুই জলনিকাশির সমস্যা দূর করা? নাকি বরাবরের মত গরিব-সহজ টার্গেট? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি এক ধরণের চেনা কৌশল। পুরসভা বা জেলা প্রশাসন কোনো সমস্যায় পড়লেই, একটি হাই-ভিজিবল উচ্ছেদ নাটক মঞ্চস্থ করে।