
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ২৬ জুলাইঃ শিলচর শহরের বুকে আবারও প্রশ্নের মুখে মানবিকতা এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা। বিকলাঙ্গ এক দোকানদারের মাথার উপর থেকে যেন রাতারাতি ছিনিয়ে নেওয়া হল ছাদ, পুড়িয়ে দেওয়া হল পঁচিশ বছরের পরিশ্রম, জীবন সংগ্রামের একমাত্র ভরসার জায়গা। ঘটনাটি হাইলাকান্দি রোড সংলগ্ন এলাকা যেখানে বিকাশ সিং নামক এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে একটি মিনারেল ওয়াটারের দোকান চালিয়ে আসছেন। দোকানটি তাঁর পিতা, প্রয়াত বিহারী সিং গড়ে তুলেছিলেন এবং মৃত্যুর আগে জমিটি বৈধভাবে স্ত্রীর নামে দলিলকৃত করে যান।
সেই থেকে বিকাশ সিং তাঁর বিকলাঙ্গ শরীর নিয়ে নিজে দোকান চালিয়ে সংসার সামলাচ্ছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার শিলচর পৌর নিগম থেকে জারি হওয়া এক নির্দেশপত্রে ওই দোকানটিকে অবৈধ স্থাপনা ঘোষণা করে ২১ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে বলা হয়েছে! এই নির্দেশে রীতিমতো ক্ষুব্ধ এবং হতবাক বিকাশ সিং সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, আমি তো শুধু জল বিক্রি করি, কারও জমি দখল করিনি, কোনও বেআইনি কাজ করি না। পঁচিশ বছর ধরে এখানে আমি বসে সংসার চালাচ্ছি। এখন হঠাৎ করে আমাকে বলছে দোকান ভেঙে দাও! কেন? কিসের ভিত্তিতে? আদালতের কোনও নির্দেশ ছাড়াই এই পৌর নিগম কি নিজের ইচ্ছেমত আইন বানাতে পারে?
তিনি আরও অভিযোগ করেন, শিলচর পৌর নিগমের এই আচরণ সম্পূর্ণরূপে পক্ষপাতদুষ্ট এবং কোনো এক অদৃশ্য আর্থিক লেনদেনের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে তিনি ‘অমানবিক’এবং ‘আইনের অপপ্রয়োগ’বলে অভিহিত করেছেন। একজন বিকলাঙ্গ মানুষ, যিনি হুইলচেয়ারে বসেই পেট চালান, তাঁর বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ কেবল নির্মমই নয়, বরং প্রশ্ন তোলে প্রশাসনের মনুষ্যত্ববোধের ওপর। আদালতের রায় ছাড়া একটি স্থাপনা কীভাবে ‘অবৈধ’ঘোষণা করা যায়? শিলচর পৌর নিগম কি আদালতেরও উর্ধ্বে উঠে গেছে?
এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে, যদি এই দোকানটি সত্যিই অবৈধ হত, তাহলে এতদিন ধরে পৌর নিগম নিশ্চুপ কেন ছিল? পঁচিশ বছর কেন চোখ বন্ধ করে ছিল? নাকি এখন এই জায়গাটি কোনও প্রভাবশালী মহলের নজরে পড়েছে এবং তা হাতিয়ে নিতে চাইছে? বিকাশ সিং জানিয়েছেন, তিনি এই ‘অমানবিক’নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, আইন এখনও সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতির হাতে বিক্রি হয়ে যায়নি, এবং একদিন তিনি সুবিচার পাবেন। আমি আদালতের কাছে যাব।
আমার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ন্যায়ের জন্য শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়ব, বলেন হতাশ কিন্তু দৃঢ়চেতা বিকাশ। এই ঘটনা সামনে আসার পরেও শহরের বিশিষ্টজন, মানবাধিকার কর্মী, কিংবা রাজনৈতিক মহল কেউই মুখ খোলেননি এ যেন নীরবতা দিয়ে অন্যায়কে অনুমোদন দেওয়া। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির আজ যে কতটা অভাব, এই ঘটনায় প্রমাণ।