জেলা পরিষদের টিকিট ১০ লাখ টাকার বিক্রির অভিযোগে বিধায়ক খলিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ল কংগ্রেস কর্মীরা

কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে অনুষ্ঠান পরিণত হয় এক উত্তপ্ত নাট্যমঞ্চে। অনুষ্ঠানে মোট ৮ জন জেলা পরিষদ সদস্য ও ৩৭ জন আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্যকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন শিলচর জেলা কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ পাল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান ও প্রাক্তন বিধায়ক-নেতৃবৃন্দ। সব ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু বিধায়ক খলিল উদ্দিন মজুমদারের বক্তব্য শুরু হতেই পরিস্থিতি রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

বিধায়ক খলিল উদ্দিন মজুমদার যখন বক্তব্য রাখছিলেন, ঠিক তখনই কিছু কংগ্রেস কর্মী সরাসরি তাঁকে লক্ষ্য করে জেলা পরিষদের টিকিট বিক্রির অভিযোগ তোলেন। অভিযোগ ওঠে, প্রার্থীদের কাছ থেকে দশ লক্ষ টাকা করে নিয়ে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। এই গুরুতর অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে উপস্থিত কর্মীদের একাংশ। তুমুল হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। কয়েকজন ক্ষুব্ধ কর্মী মঞ্চে উঠে বিধায়ককে ঘিরে ফেলেন, এমনকি শারীরিক আক্রমণেরও চেষ্টা করা হয় বলে জানা যায়।

পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, উপস্থিত বিধায়ক মিসবাহুল ইসলাম লস্কর, প্রাক্তন বিধায়ক আমিনুল হক লস্কর ও অন্যান্য সিনিয়র নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এগিয়ে আসেন। তাঁদের হস্তক্ষেপে কোনোভাবে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়। কিন্তু পরিবেশ এতটাই উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিল যে, বাধ্য হয়ে বিধায়ক খলিল উদ্দিন মজুমদার অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।

একজন নির্বাচিত বিধায়ক হিসেবে খলিল উদ্দিন মজুমদারের ওপর মানুষের আস্থা, প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু যেভাবে তাঁর বিরুদ্ধে দলের ভিতর থেকেই ঘোরতর অভিযোগ উঠেছে I এই প্রশ্ন আজ স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে—বিধায়ক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন, নাকি গোপনে প্রার্থী নির্বাচনের নামে এক অসৎ বাণিজ্য পরিচালনা করছেন? টাকা নিয়ে টিকিট দেওয়া হলে রাজনীতিতে আদর্শ ও যোগ্যতার কোনও মূল্য থাকে না।

এই অবস্থায় সাধারণ কর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়ে। এক শ্রেণির সুযোগসন্ধানী প্রার্থী টাকার জোরে দলে জায়গা করে নেয়। আর প্রকৃত, নিষ্ঠাবান ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েন ব্রাত্য। শিলচরের রাজনীতির মাটিতে এই ঘটনাকে ঘিরে যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করতে পারে। সবচেয়ে হতাশাজনক দিক ছিল বিধায়ক খলিল উদ্দিন মজুমদারের আচরণ।

কর্মীদের মুখোমুখি হয়ে প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরিবর্তে তিনি কৌশলে সভাস্থল ত্যাগ করেন। একজন জনপ্রতিনিধি যদি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সম্মুখীন হতে না পারেন, তাহলে সেই নেতৃত্বের মূল্য কতটুকু? নেতৃত্ব মানে কেবল বক্তৃতা দেওয়া নয়, বরং প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দাঁড়িয়ে থেকে নিজের দায়িত্ব পালন করা। কিন্তু এই ঘটনার মাধ্যমে বিধায়ক তাঁর নেতৃত্বের ব্যর্থতার প্রমাণ দিলেন।

এই ঘটনার পর জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে একটাই বড় চ্যালেঞ্জ—দলকে রক্ষা করা। সময় এসেছে কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার। যদি সত্যিই টিকিট বাণিজ্যের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে বিধায়ক খলিল উদ্দিন মজুমদারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে এই ধরণের নেতাদের উপস্থিতি দলের ভিতরে গর্ত সৃষ্টি করবে, যা একদিন পুরো কাঠামোকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

এই ঘটনায় অনুষ্ঠান প্রায় আধ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর, পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলে পুনরায় শুরু হয় সংবর্ধনা পর্ব। এই ঘটনার কারণে বাকি অনুষ্ঠান এক প্রকার চাপা আতঙ্ক ও অস্বস্তির মধ্যে শেষ হয়। ঘটনাটি কেবলমাত্র একটি বিতর্ক নয়, এটি শিলচর জেলা কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গঠন ও নেতৃত্বের প্রতি এক বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে দিল।

দলের মধ্যে স্বচ্ছতা, জনমানসিকতার প্রতি দায়িত্ববোধ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। দলের সম্মানহানির কারণ হয়ে দাঁড়ানো এই ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত—এই দাবি তুলেছেন অনেক সিনিয়র নেতাও।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মিসবাহুল ইসলাম লস্কর, প্রাক্তন বিধায়ক আমিনুল হক লস্কর, আতাউর রহমান মাঝারভূইয়া, অজিত সিং, প্রাক্তন সভাপতি অরুণ দত্ত মজুমদার, শরিফুজ্জামান লস্কর, সূর্যকান্ত সরকার, সুজন দত্ত, দেবদীপ দত্ত ও সঞ্জীব রায়। বক্তৃতায় তাঁরা বিজয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

শিলচর জেলা কংগ্রেসের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান প্রমাণ করে দিল, যদি অভ্যন্তরীণ দলীয় শৃঙ্খলা বজায় না রাখা যায়, তাহলে তা দলের ভাবমূর্তিকেই বড়সড়ভাবে আঘাত করে। বিশেষ করে, টাকা নিয়ে টিকিট বিক্রির মতো অভিযোগ দলের ভিতকে ধ্বংস করতে পারে। রাজনীতিতে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে গেলে চাই সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। শিলচরের রাজীব ভবনের ঘটনা কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে এক ভয়ংকর বার্তা। এই মুহূর্তে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলে, আগামী দিনে দল আরও বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে—তা নিশ্চিত।

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…