কালাইন ও কাটিগড়া অঞ্চলে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই চলছে একাধিক উচ্চ মাধ্যমিক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

এর ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন ভুয়ো নথির সাহায্যে সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছে, তেমনই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি এক গভীর আস্থাহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে। বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে “এভিয়েটর” নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা কালাইন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ছাত্র ভর্তি করছে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে।

অভিযোগ অনুসারে, মাধ্যমিক পাশ করেই ছাত্রছাত্রীরা এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো বৈধ স্বীকৃতি, নেই কোনো বোর্ড অনুমোদন। অথচ ক্লাস হচ্ছে, শিক্ষাদান চলছে পুরোদমে। শিক্ষার্থীদের নাম অন্য কোনো অনুমোদিত স্কুলে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে পরীক্ষায় বসানো হচ্ছে। ফলে, সরকারি প্রকল্পে বিনামূল্যে স্কুটি, স্কলারশিপ, ইউনিফর্ম, বইপত্র সহ বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে এইসব ছাত্রছাত্রীরা, যারা আসলে পড়ছে একটি বেআইনি প্রতিষ্ঠানে। এই প্রক্রিয়া আইনত সম্পূর্ণ অবৈধ হলেও, স্থানীয় কিছু স্কুল প্রশাসন এবং সুবিধাভোগী চক্রের যোগসাজশে এটি দিব্যি চালু রয়েছে বলে অভিযোগ।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, যারা অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে এবং অন্য স্কুলের নাম ব্যবহার করে বোর্ড পরীক্ষায় বসছে, তাদের ভুয়ো ছাত্র হিসেবে গণ্য করা হবে। এই ধরনের প্রতারণামূলক কার্যক্রমে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। এই বেআইনি প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো বিজ্ঞান পরীক্ষাগার, নেই লাইব্রেরি, এমনকি পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষও নেই। নেই প্রশিক্ষিত শিক্ষক, নেই কোনো পাঠ্যক্রম অনুযায়ী মানসম্পন্ন শিক্ষাদান।

একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানোর ন্যূনতম যে পরিকাঠামো দরকার, তার কিছুই নেই। শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে ভাঙা ঘরে, অদক্ষ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে। অথচ তাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এমন একটি অব্যবস্থাপনার ওপর, যা আদতে এক গভীর প্রতারণা। স্থানীয় সচেতন মহল ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের প্রশ্ন—যেখানে শিক্ষার নামে এমন প্রতারণা চলছে, সেখানে সরকারের নজরদারি কোথায়? এসব বেআইনি প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন চলছে প্রশাসনের চোখের সামনে, অথচ তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?

শিক্ষার আলো ছড়ানোর নামে এক শ্রেণির স্বীকৃতিহীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ শিক্ষাব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করে তুলেছে। অনুমোদন ছাড়াই স্কুল খুলে বেআইনিভাবে ছাত্র ভর্তি করিয়ে পরীক্ষা দেওয়ানো এখন যেন এক ‘মুক্ত ব্যবসা’য় পরিণত হয়েছে। অথচ এই বেআইনি কারবারে যেমন শিক্ষার মান প্রশ্নের মুখে পড়ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎও অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

একজন অভিজ্ঞ প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এইভাবে ভুয়ো রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি করানো ও পরীক্ষায় বসানো শুধু বেআইনি নয়, শিক্ষাকে একেবারে পণ্য বানিয়ে ফেলার সামিল। এটি শুধুই ব্যবসায়িক লাভের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারকে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এইসব স্বীকৃতিহীন স্কুলে পড়াশোনা করছে এমন বহু ছাত্রছাত্রী ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি বা সরকারি চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে বড় সমস্যার মুখোমুখি হবে-একথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরা।

স্থানীয় বহু অভিভাবক আজ বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, আমরা না জেনেই এমন একটি স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করিয়েছি। এখন বুঝতে পারছি কীভাবে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। এতদিন ধরে টাকা খরচ করে ভুয়ো প্রতিষ্ঠানে পড়িয়ে সন্তানদের জীবনই নষ্ট করে ফেলেছি। অভিভাবকদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছু লোভী স্কুল-মালিক টাকা রোজগারের লোভে পড়ে নিষ্ঠাবান ছাত্রদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিচ্ছেন। এর ফলে সমাজের শিক্ষা ব্যবস্থায় ভরসা কমে যাচ্ছে।

এই বেআইনি প্রবণতা রুখতে অসম সরকার ইতিমধ্যেই কঠোর নির্দেশিকা জারি করেছে। সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, স্বীকৃতিহীন স্কুলে পড়ুয়ারা কোনও রকম সরকারি সুবিধা পাবে না। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গেছে, এখন থেকে প্রতিটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা, ভর্তি প্রক্রিয়া এবং রেজিস্ট্রেশনের অডিট করা হবে। অস্বচ্ছতা বা ভুয়ো নথিপত্র প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরণের বেআইনি কার্যকলাপ দেশের শিক্ষার মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে।

উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ভুয়ো ছাত্র তৈরির এই প্রক্রিয়া দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অযোগ্য ও প্রতারণাপূর্ণ পরিবেশে বড় হতে বাধ্য করছে। একটি শিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলার জন্য যেখানে মানসম্মত শিক্ষা অপরিহার্য, সেখানে এমন ভুয়ো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এটি শুধু বেআইনি নয়, এক ধরনের নৈতিক অপরাধ।

এই ধরনের প্রতিষ্ঠান ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত শুরু করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে শিক্ষার অবমূল্যায়ন ঘটবে—এমন আশঙ্কা করছেন বিশিষ্টজনেরা। এই প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে আমরা শিক্ষা দফতর, জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। শিক্ষার নামে এই বাণিজ্য বন্ধ হোক, বেআইনি প্রতিষ্ঠানগুলিকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক—এই দাবিতেই সরব আজ কালাইনের সচেতন সমাজ।

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…