
বরাকবাণী প্রতিবেদন বদরপুর,৬ জুন বদরপুরে ভয়াবহ বন্যার করালগ্রাসে জনজীবন বিপর্যস্ত। ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, রাস্তাঘাট সব কিছুই এখন জলের নিচে। এমন পরিস্থিতিতে যখন দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা জরুরি ছিল, তখনই অভিযোগ উঠেছে, ত্রাণ বণ্টনে চরম বৈষম্য ও স্বজনপোষণ করেছেন বদরপুরের বিধায়ক আব্দুল আজিজ এবং তাঁর পরিবার। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্যার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এলাকায় বিধায়ককে দেখা যায়নি। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর ন্যূনতম প্রচেষ্টাও করেননি তিনি।
গতকাল তাঁর পুত্র বদরপুরের কয়েকটি এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন, কিন্তু সেই ত্রাণ গিয়েছে কেবল একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের হাতে। আর এই নিয়েই শুরু হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও বিতর্ক। মহাকল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একাধিক বানভাসি পরিবার অভিযোগ তুলেছে, আমরা সবাই একসঙ্গে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, হিন্দু-মুসলিম সবাই।
অথচ বিধায়কের ছেলের ত্রাণ বিলিতে শুধু একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাম থাকল, অন্যরা উপেক্ষিত থেকে গেল। এটা কি ত্রাণ বণ্টন, না ভোটের রাজনীতি? তারা আরও বলেন, একদিকে সরকার দেদার ত্রাণ পাঠাচ্ছে, আবার স্থানীয় বিধায়কের পরিবার সেই ত্রাণ বণ্টন করে সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে বিভাজন করছেন। এতে সমাজে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিত রায় বলেন, আমরা বিধায়ক আজিজ সাহেবকে ভোট দিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম সবাইকে নিয়ে চলবেন। কিন্তু এখন দেখছি, দুর্যোগের সময় তিনি একপক্ষকে নিয়ে ব্যস্ত। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। একইসঙ্গে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তাঁদের মতে, ত্রাণ সাহায্য যেন ধর্ম দেখে না দেওয়া হয়। আমাদের গ্রামে মুসলিম ও হিন্দু-দুজনেই বিপদে পড়েছে। কারো ঘর ভেসে গেছে, কারো চাষ নষ্ট। সেখানে কে কোন ধর্মের সেটা না দেখে মানবতার দৃষ্টিতে ত্রাণ বিলি হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে বিধায়ক আব্দুল আজিজের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি বা কোনো প্রতিক্রিয়াও জানাননি।
প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এই অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি এখনো পর্যন্ত। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে। এমন দুর্যোগে যেখানে একজোট হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো দরকার, সেখানে যদি ত্রাণ নিয়েই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অভিযোগ ওঠে তবে প্রশ্ন উঠবেই। আর সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে।