
বরাকবাণী প্রতিবেদন নিলামবাজার, ১৬ মে: দীর্ঘদিন ধরে যাত্রাপুর রোড এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে নরকসম জীবনযাপন করতে থাকা নিলামবাজারবাসীর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায় মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে। মাত্র এক পশলা বৃষ্টিতে যাত্রাপুর রোডের প্রায় ১৫টি গ্রাম, স্কুল, অফিস, আদালতসহ বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। হাঁটুসমান জল জমে যাওয়ায় মানুষের দৈনন্দিন জীবন একপ্রকার থমকে যায়।
এই পরিস্থিতিতে জনগণের ক্ষোভ চরমে পৌঁছে, যার ফলস্বরূপ আজ জনগণের চাপের মুখে পড়ে বাধ্য হয়ে নড়েচড়ে বসেন দক্ষিণ করিমগঞ্জের বিধায়ক ছিদ্দিক আহমেদ। আজ সকালে নিলামবাজার সার্কেল অফিসে এক জরুরি বৈঠকের আয়োজন করা হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক ছিদ্দিক আহমেদ নিজে, পাশাপাশি ছিলেন বিজেপি নেত্রী শিপ্রা গুণ, আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য জীবিতেশ দাস, ওয়ার্ড সদস্য জ্যোতিষ্ক পোদ্দার, সমাজসেবী হেলাল উদ্দিন, আব্দুল মুনিম এবং কংগ্রেসের যুব নেতা বিপ্লব দাস। জনগণের অভূতপূর্ব চাপ ও ক্ষোভের মুখে পড়ে বিধায়ক অবশেষে এলাকাবাসীর সঙ্গে বৈঠকে বসে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

বৈঠক শেষে সরেজমিনে যাত্রাপুর রোড পরিদর্শনে যান বিধায়ক ছিদ্দিক আহমেদ। সঙ্গে ছিলেন সার্কেল অফিসার ও বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়াররা। প্রাথমিকভাবে জমে থাকা পানির অস্থায়ী নিষ্কাশনের জন্য বুলডোজার নামিয়ে কিছুটা জল ছাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিধায়ক জানান, খুব শীঘ্রই মাস্টার ড্রেনের কাজ শুরু করা হবে। আজকের পরিদর্শনের ভিত্তিতে প্রকৌশলী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজের রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে।
অন্যদিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তাঁদের দাবি, স্থানীয় জলনিষ্কাশনের জন্য নির্মিত বহু পুরনো নালা স্বয়ং বিধায়ক ছিদ্দিক আহমেদ ভরাট করে সেখানে নিজের জমি তৈরি করে মোটা অঙ্কে তা বিক্রি করেছেন। ফলে যাত্রাপুর রোডের মূল নালাগুলি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এই অভিযোগ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, বিধায়ক কুম্ভকর্ণের নিদ্রায় মগ্ন। জনগণ ডুবে মরলেও উনি ব্যস্ত নিজের সম্পত্তি ও উন্নয়নের প্রচারে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মাকে নিজের ‘কাছের মানুষ’ বলে দাবি করেন ঠিকই, কিন্তু সমষ্টির উন্নয়নের জন্য আজ পর্যন্ত কোনও বড় প্রকল্প আনতে পারেননি। শুধু প্রতিশ্রুতি আর ভাওতাবাজি করে ভোট আদায় করেছেন। গত বছরের বন্যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাস্টার ড্রেনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এক বছর কেটে গেলেও আজও সেই কাজ বাস্তবায়িত হয়নি।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে আজ এলাকায় ছুটে আসেন নবনির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য অভিজিৎ রায়। সঙ্গে ছিলেন আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য জীবিতেশ দাস ও ওয়ার্ড সদস্য জ্যোতিষ্ক পোদ্দার। কংগ্রেসের বিপ্লব দাস, যিনি সদ্য নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন, তিনিও উপস্থিত হয়ে জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেন।
অভিজিৎ রায় জানান, “যাত্রাপুর রোডের জলাবদ্ধতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি শীঘ্রই সার্কেল অফিসারের সঙ্গে কথা বলে স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করব। বিধায়ক কথা দিয়ে কথা রাখেননি, ফলে জনগণ আজ নরক যন্ত্রণায় ভুগছে। অভিজিৎ রায়ের কথার পর নিলামবাজার সার্কেল অফিসার জনগণের উদ্দেশ্যে জানান, আমরা ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছি।
দ্রুত নালাগুলি পরিদর্শন করে যত দ্রুত সম্ভব সেগুলি পরিষ্কার করে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে। প্রশাসনের এই তৎপরতায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছে এলাকাবাসী। যাত্রাপুর রোডের এই জলাবদ্ধতা নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে এলাকাবাসী প্রতিনিয়ত এই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জনপ্রতিনিধিদের বারবার বলা সত্ত্বেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ।
বর্তমানে জেলার নবনির্বাচিত পরিষদ সদস্যদের সরব উপস্থিতি এবং সার্কেল অফিসারের আশ্বাসে এলাকাবাসী আশাবাদী হলেও, তারা একসুরে বলছেন, এবার আর শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, আমরা কাজ চাই। যাত্রাপুর রোডে মাস্টার ড্রেন চাই – স্থায়ী সমাধান চাই।