দুই বছর ধরে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ, তবুও শুরু হয়নি কাজ বর্ষায় গর্তে জমে জল, প্রাণ হাতে নিয়ে যাতায়াত

ফলে প্রাণ হাতে নিয়েই প্রতিদিন চলাচল করতে হচ্ছে হাজার হাজার যাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। বিশেষত, করিমগঞ্জ থেকে বদরপুর পর্যন্ত প্রায় ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ জাতীয় সড়কের বহু জায়গা এখন দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ভরা। ছোট-বড় যানবাহনের জন্য এ সড়ক এখন রীতিমতো বিপজ্জনক। কোথাও গর্তের গভীরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেখান দিয়ে চলাচলের সময় ছোট গাড়ির ভিতরেও জল ঢুকে পড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই এই রাস্তার দুরবস্থা প্রশাসনের ও পূর্ত দফতরের নজরে থাকলেও কোনো স্থায়ী সংস্কারের উদ্যোগ দেখা যায়নি। বরং প্রতি বছর বর্ষা আসার আগে আশ্বাসের ফুলঝুরি ঝরে, আর কাজ হয় কেবল জোড়াতালির। সেই কাজও থাকে নিম্নমানের, ফলে কয়েক সপ্তাহ না যেতেই রাস্তা আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

দু’বছর আগে এই সড়ক চওড়া করার জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও, সেই প্রকল্প কাগজেই সীমাবদ্ধ থেকেছে বলে অভিযোগ। পূর্ত দফতরের পক্ষ থেকে একাধিকবার শীঘ্রই কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে তার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

জেলা বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার চেয়ারম্যান ইকবাল হুসেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, (NHIDCL) ও সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন বর্ষার আগেই কাজ শুরু হবে। আমরা সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ নিয়েছি। তবে জনগণের একাংশ এই আশ্বাসকে আর বিশ্বাস করতে রাজি নয়।

স্থানীয়দের প্রশ্ন যদি সড়ক মাপজোক শেষ হয়েই থাকে, তাহলে কেন এখনো কাজ শুরু হয়নি? পূর্ত দফতরের করিমগঞ্জ জেলার নির্বাহী বাস্তুকার অবশ্য জানিয়েছেন, বর্তমানে বর্ষার কারণে বড়সড় সংস্কার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। আপাতত গর্তে বরাটের কাজ করা হচ্ছে, যাতে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক রাখা যায়।কিন্তু তাতে সমস্যার মূলে কোনো পরিবর্তন আসছে না।

বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে। বেহাল রাস্তার কারণে প্রতিদিন ঘটে চলেছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। আহত হয়েছেন বহু যাত্রী। ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণও ক্রমেই বাড়ছে। সময়ও লাগছে দ্বিগুণ, যার ফলে অফিসযাত্রী, ছাত্র-ছাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

দু’বছর ধরে শুধু আশ্বাস পাচ্ছি, কাজের দেখা নেই। পুজোর আগে ইট-সুরকি দিয়ে যেটুকু কাজ হয়েছিল, তা বর্ষা শুরু হতেই উঠে গেছে। এখন সেই গর্তে বৃষ্টির জল জমে রীতিমতো পুকুর হয়ে গেছে, ক্ষোভের সঙ্গে বললেন স্থানীয় এক দোকানদার। তীব্র সমালোচনা করে অনেকেই বলছেন, এ যেন জনজীবনের সঙ্গে সরাসরি তামাশা। সরকারি দফতর আর প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় জনগণ আজ অসহায়।

যদিও বিজেপি নেতা ইকবাল হুসেনের উদ্যোগে কাজ শুরু হওয়ার আশ্বাসে কিছুটা আশার আলো দেখছেন সাধারণ মানুষ। তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনেকেই বলছেন, অন্তত কেউ তো এগিয়ে এসেছেন। এখন দেখার বিষয়, আদৌ কাজ শুরু হয় কিনা, নাকি এও শুধুই আরেকটা প্রতিশ্রুতি হয়ে থেকে যায়।

সর্বোপরি, করিমগঞ্জ জেলার মৈনা অঞ্চলের জাতীয় সড়ক সংস্কার নিয়ে যে প্রশাসন ও পূর্ত দফতরের মধ্যে চূড়ান্ত গাফিলতি রয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জনগণের দাবি, অবিলম্বে স্থায়ী ও মানসম্মত সংস্কার কাজ শুরু করে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক যাতায়াত নিশ্চিত করুক কর্তৃপক্ষ, না হলে এই ক্ষোভ আরও বিস্ফোরিত হতে পারে।

Related Posts

মিয়ানমারের ৪.৭ মাত্রার রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মণিপুর, নাগাল্যান্ড সহ আসাম, এখনো হতাহতের খবর নেই, আতঙ্কে বহু মানুষ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করেই কেঁপে উঠল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। সকাল ৬টা ১০ মিনিটের সময় বহু মানুষ এখনো ঘুমের রাজ্যে। সেই সময় আচমকা কেঁপে ওঠে মাটি। প্রথমে…

শিলচর ডিসি অফিসে বাবু সিণ্ডিকেটের চাঁই সৌমিত্র নাথ ধর্ষণ অভিযোগে গ্রেফতার

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৩০ সেপ্টেম্বরঃ শিলচর শহর কেঁপে উঠেছে জেলা কমিশনারের কার্যালয়কেন্দ্রিক এক নারীর প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনায়। সরকারি দফতরের ভেতরেই যখন নারী সহকর্মী নিরাপদ নন, তখন সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার…