ভারতমালার পরিকল্পনাহীন নির্মাণ, বন্ধ খাল, নেই ড্রেনেজ জলমগ্ন কান্দিগ্রাম-জালালপুর । ড্রেনেজ নেই, খাল ভরাট, জল নিষ্কাশনের পথ বন্ধ—সরকারের উন্নয়ন এখন বন্যার মূল কারণ!

তাঁকে ঘিরে একের পর এক অভিযোগ উগরে দেন ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, যেখানে একসময় খাল ছিল, সেখানে এখন শুধুই কংক্রিট। বৃষ্টি হলেই জল নামার পথ খুঁজে পায় না। সব জল ঢুকে পড়ে ঘরে। আমরা কি এই দুর্ভোগের জন্য ভোট দিয়েছিলাম? স্থানীয় কৃষক সঞ্জীব মণ্ডল বলেন, এখানে আগে জল খুব সহজেই নেমে যেত। কিন্তু এখন? রাস্তা হয়েছে, কিন্তু তার নিচে ড্রেন নেই। কোথাও খাল বন্ধ করে নির্মাণ করা হয়েছে, কোথাও আবার জলধারণের জায়গাগুলো মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলেই জল জমে। এবার তো তিনদিনের বৃষ্টিতেই পুরো গ্রাম নদী হয়ে গেল।

একটি এত বড় প্রকল্প শুরু করার আগে পরিবেশগত প্রভাব, এলাকার ভৌগোলিক চরিত্র, জল নিষ্কাশনের দিক—এইসব না দেখেই শুরু হয় নির্মাণ কাজ। সবটাই হয়েছে কাগজে-কলমে, বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। তার উপর ঠিকাদারদের কারসাজি ও দপ্তরের গাফিলতিতে খোলামাঠে ড্রেনেজের মতো অপরিহার্য ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। একজন শিক্ষক বলেন, এই দুর্যোগ প্রাকৃতিক যত না, তার চেয়ে বেশি প্রশাসনিক।

ঠিকাদার মুনাফা তুলছে, জনপ্রতিনিধি ভাগ বসাচ্ছেন, আর আমাদের কাঁধে পড়ছে দুর্ভোগের বোঝা। পরিদর্শনের সময় পরিমল রায় কেবল আশ্বাস দিয়েছেন, “সমস্যার কথা শুনেছি, দ্রুত বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে। তবে এলাকাবাসীর বক্তব্য, এই এক কথা আমরা বহুবার শুনেছি। ফল কিছুই হয়নি। আমাদের কথা শোনার লোক নেই। বিধায়ক আসেন না, পঞ্চায়েত সদস্য চোখে পড়েন না। শুধু কাগজে উন্নয়ন, মাটিতে দুর্ভোগ।

জনগণের অভিযোগ আরও গুরুতর। তারা বলছেন, ঠিকাদারের পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী কাজের মান নির্ধারিত হচ্ছে। যে রাস্তা হওয়ার কথা ছিল ড্রেনের পাশে, তা হয়েছে জলধারণ এলাকায়। আবার কিছু জায়গায় মাটি ফেলে খাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে কাজ কম, লাভ বেশি। সবই হয়েছে জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নীরব সম্মতিতে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য একাধিকবার নালিশ জানালেও প্রশাসন নির্বিকার থেকেছে বলে অভিযোগ।

এক কথায়, গোটা কান্দিগ্রাম-জালালপুর এলাকায় এখন একটাই দাবি—অতিসত্বর সঠিক পরিকল্পনা করে জল নিষ্কাশনের স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। খাল পুনঃখনন, ড্রেন তৈরি ও নিকাশি পথ অবাধ রাখতে হবে। তা না হলে বর্ষা আসা মানেই ঘরছাড়া হওয়া এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে নারাজ সাধারণ মানুষ। ভোটের সময় কেউ বাদ যায় না, দুর্যোগে কেবল আমরা এই মর্মবাণী এখন কান্দিগ্রাম-জালালপুরবাসীর হৃদয়ভেদী আর্তনাদ।

Related Posts

এনএইচএম কর্মীদের কর্মবিরতিতে অচল স্বাস্থ্য পরিষেবা

বরাকবাণী প্রতিবেদন, কচুদরম ২রা নভেম্বরঃ বরাক উপত্যকা সহ গোটা অসমে দিনকে দিন তীব্রতর হচ্ছে এনএইচএম (ন্যাশনাল হেলথ মিশন) কর্মীদের আন্দোলন ও কর্মবিরতি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে স্বাস্থ্য পরিষেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। হাসপাতাল…

দক্ষিণ করিমগঞ্জে জোয়ার-ভাটার রাজনীতি, ইকবাল বনাম হাফিজ রশিদে সম্ভাব্য হাইভোল্টেজ লড়াই !

মইনুল হক বরাকবাণী প্রতিনিধি শ্রীভুমি, ২রা নভেম্বরঃ আসন্ন ২৬-শের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে শ্রীভুমি জেলায় রাজনীতির উত্তাপ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। নদী-সাগরের মতো রাজনীতিতেও আছে জোয়ার-ভাটা, কখনও উত্থান, কখনও পতন। কিন্তু পার্থক্য…