আসাম-নাগাল্যান্ড সীমান্তে ফের উত্তেজনা ! নামতোলায় নাগা-আক্রমণে আতঙ্কিত অসমবাসী, দুই রাজ্যের জনসাধারণের যাতায়াত ব্যাহত

এরপর থেকে দুই রাজ্যের মধ্যে অবিশ্বাস ও উত্তেজনার আবহ ক্রমেই ঘনীভূত হয়েছে। জানা গেছে, নামতোলায় নাগা সম্প্রদায়ের কিছু যুবক সোমবার বিকেলে প্রকাশ্যে আক্রমণ চালায় স্থানীয় দুই অসমবাসীর উপর। আক্রান্তদের মধ্যে একজন হলেন রামু শাহ, যিনি পেশায় ব্যবসায়ী।

অপরজন ‘পণ্ডিত’ উপাধিধারী এক ব্যক্তি, যাঁর ওপরেও বেধরক মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এই বর্বরে ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা নামতোলা অঞ্চলে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

এদিকে, এই আক্রমণের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন সোনারির নামতোলা এলাকায় উত্তেজিত নাগা যুবকেরা আসাম পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে। হঠাৎ ছড়িয়ে পড়া এই হিংসাত্মক ঘটনার জেরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়।

পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই রাজ্যের মানুষজনের যাতায়াত কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। যদিও পরে চরাইদেউ জেলার পুলিশ সুপার সুরজিত সিং পানেসর স্বয়ং ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনেন। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা অপহরণ সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্ত চালাতে গিয়ে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছি, একজন নামতোলার এবং অপরজন নাগাল্যান্ডের বাসিন্দা।

আমরা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়েছি। কেউ যদি এই বিষয়ে আপত্তি জানাতে চান, তাহলে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং নাগাল্যান্ড পুলিশের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই গ্রেফতারির পেছনে রয়েছে গত বছরের নভেম্বর মাসে ঘটিত এক চাঞ্চল্যকর অপহরণ কাণ্ড। ২৫শে নভেম্বর নামতোলার ব্যবসায়ী মুশলেক আলী নিখোঁজ হয়ে যান। তদন্তে উঠে আসে যে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল, এবং সেই কাণ্ডে জড়িত ছিল নাগাল্যান্ডের হনতং কন্যাক ও চিপাহী পণ্ডিত নামের দুই ব্যক্তি। সেই ঘটনাতেই সাম্প্রতিক গ্রেফতারি ঘটে, যা নাগা সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দেয় এবং সীমান্ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

এই মুহূর্তে সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দুই রাজ্যের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে আলোচনা ও সমন্বয় বজায় রাখা হচ্ছে। তবু নামতোলার মতো সংবেদনশীল এলাকায় নাগা-অসমীয়া দ্বন্দ্ব নতুন করে মাথাচাড়া দিলে ভবিষ্যতে বড়সড় সংঘাতের আশঙ্কা থেকেই যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।

কিন্তু আমাদের উপর যেভাবে নাগা যুবকেরা আক্রমণ চালাল, তা মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনের উচিত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। অন্যদিকে নাগাল্যান্ডের পক্ষ থেকেও সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য যে, আসাম-নাগাল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উভয় রাজ্যের মধ্যে টানাপোড়েন চলে আসছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান আজও অধরা। জনগণ চাইছে, দুই রাজ্যের সরকার আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসুক এবং ভবিষ্যতে যেন আর কোনো নিরীহ মানুষ এই দ্বন্দ্বের বলি না হন।

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…