যোগীর ছদ্মবেশে দুর্নীতির সাম্রাজ্য! প্রজাপতি ব্রহ্মাকুমারীর আড়ালে কোটি টাকার কেলেঙ্কারি!

অভিযোগ, আধ্যাত্মিকতার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তুলেছেন এক প্রলোভনময় প্রতারণার সাম্রাজ্য। ভক্ত রিপন নাথ, সুমন্ত পাল, পীযূষ চৌধুরী, রামানুজ ভট্টাচার্য, মুন্না দেবনাথ, সুব্রত নাথ এবং জয়া ভট্টাচার্য একযোগে অভিযোগ করেন, যোগীর বেশে ভোগীর জীবন কাটাচ্ছেন জেউতি কলিতা।

শিষ্যদের কাছ থেকে রসিদহীন ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা সংগ্রহ। শিষ্য ও শিষ্যপত্নীদের প্ররোচিত করে স্বামীদের পকেট থেকে টাকা তুলে এনে সেন্টারে দান করানো। একনায়কতান্ত্রিক ভাবে সেন্টার পরিচালনা করে আধ্যাত্মিকতার বদলে অর্থ উপার্জনকে প্রধান লক্ষ্য করা। মিথ্যাচার, প্রতারণা ও মানসিক দমনপীড়ন ব্যবহার করে শিষ্যদের নিয়ন্ত্রণ করা।

সুসীম নাথের বিরুদ্ধে শহরের দ্বিতীয় লিংকরোড এলাকায় জলজীবন মিশনের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বেআইনিভাবে অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, সৌমেন পালচৌধুরীর বিরুদ্ধে রয়েছে এক অসহায় বিধবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ।

আধ্যাত্মিক উন্নয়ন, আত্মশুদ্ধি ও সেবার মন্ত্রে পরিচালিত ঈশ্বরীয় প্রজাপিতা ব্রহ্মাকুমারী চাঁদমারি রোড শাখা আজ বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। এক নিঃসন্তান বৃদ্ধা শিষ্যার হৃদয়বিদারক অভিযোগ এবং তার জেরে সৃষ্ট চাঞ্চল্যে হতবাক শিলচরের সুশীল সমাজ। ৮৫ বছর বয়সী কণিকা শর্মা, যিনি এক সময় সরকারি চাকরিরত ছিলেন এবং অবসর গ্রহণের পর ব্রহ্মাকুমারীদের শিষ্যা হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করেন, সম্প্রতি বাঙালি নবনির্মাণ সেনার সহায়তায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন।

সাংবাদিক সম্মেলনের ঠিক পরদিন, বাঙালি নবনির্মাণ সেনার কর্মকর্তা ও স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা সরাসরি সেন্টারে গিয়ে জেউতি কলিতাকে জবাবদিহির মুখে ফেলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে, ঘটনাস্থলে হাজির হন একাধিক বিক্ষুব্ধ ভক্ত। তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা জানিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দেন। ঘটনার জল গড়ায় আরও দূর।

পরদিনই পালটা সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সমস্ত অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেন জেউতি কলিতা। তবে তাতেও থামেনি বিতর্কের আগুন। এবার সেন্টারেরই একাংশ ক্ষুব্ধ ভক্ত প্রকাশ্যে মুখ খোলেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, জেউতি কলিতা ব্যক্তিগত স্বার্থে সেন্টার পরিচালনা করছেন এবং আধ্যাত্মিকতার নামে একক কর্তৃত্ব কায়েম করেছেন।

একটা আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠানে যখন ঈশ্বরের নামের ছায়ায় মানুষ খোঁজে মানসিক শান্তি, তখন সেই প্রতিষ্ঠানের ভিতর থেকেই যদি শোনা যায় মিথ্যাচার, স্বজনপোষণ, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ—তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা কোথায় দাঁড়াবে?

চাঁদমারি রোডের প্রজাপিতা ব্রহ্মাকুমারী আশ্রমের প্রধান জেউতি কলিতার বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ এনে সরব হয়েছেন আশ্রমের ভক্ত ও একাংশ সদস্য। তাঁদের দাবি, আধ্যাত্মিকতার মুখোশ পরে দিনের পর দিন ভক্তদের বিভ্রান্ত করে চলেছেন জেউতি কলিতা।

অবস্থার বেগ সামলাতে না পেরে জেউতি কলিতা ঘটনাটিকে অসমীয়া বিদ্বেষের রঙ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ। কিন্তু সংগঠনের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, ব্রহ্মাকুমারী সংস্থা এমন এক আধ্যাত্মিক পরিবার যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে দেখা হয়।

হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান—সকলেই এখানে জড়িত। ফলে অসমীয়া বিদ্বেষের অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর বলেই মত তাঁদের। জেউতি কলিতার বিরুদ্ধে শুধুমাত্র কণিকা শর্মার বিতাড়নই নয়, দীর্ঘদিন ধরেই নানা অনিয়ম, স্বজনপোষণ এবং একনায়কতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। একাধিকবার উপরমহলে অভিযোগ জানানো হলেও, রহস্যজনকভাবে আজও কোনও তদন্ত শুরু হয়নি।

এতে ভক্তদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ভক্তরা এখন দাবি তুলেছেন—চাঁদমারি রোড শাখা থেকে অবিলম্বে জেউতি কলিতাকে অপসারণ করতে হবে। তাঁদের বক্তব্য, এই ধরণের বিতর্ক ও আর্থিক কেলেঙ্কারি সংগঠনের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করছে।

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…