
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ৮মেঃ পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলাজুড়ে যখন রাজনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে, ঠিক তখনই মাদক মাফিয়ারা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জেলায় মাদক পাচার কার্যক্রম আরও বেপরোয়া করে তুলেছে। মাদক চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে মাদক পাচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তাদের এই অপচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে বদ্ধপরিকর কাছাড় পুলিশ।
জেলা পুলিশের সৎ, সাহসী ও নিরলস অভিযান ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক সাফল্য এনে দিয়েছে। প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে একের পর এক মাদক সহ পাচারকারীদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি কাছাড় জেলার শালচাপড়া অঞ্চল থেকে ধরা পড়ল দুই চিহ্নিত মাদক কারবারি।
গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসপি নোমান মাহাতোর নেতৃত্বে এক বিশেষ অভিযান চালিয়ে কাছাড় পুলিশ এস ১৮ এসি ৫৮৪৭ নম্বরের একটি চারচাকা গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৮৪৭ গ্রাম হেরোইন ও ৪.০৩৫ কিলোগ্রাম আফিম উদ্ধার করে। গাড়িটি মনিপুরের চূড়াচাঁদপুর থেকে কাছাড়ে প্রবেশ করছিল বলে জানা গেছে। ওই গাড়ি থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দুই মাদক পাচারকারী এমন খান ও সেলিম।
পুলিশ সুপার নোমান মাহাতো জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া হেরোইন ও আফিমের বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। তিনি আরও বলেন, আসাম সরকার এবং মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নির্দেশে রাজ্যকে মাদকমুক্ত করার যে সংকল্প নেওয়া হয়েছে, তারই অংশ হিসেবে কাছাড় পুলিশ প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এই অভিযান আরও জোরদার হবে।
মাদক পাচারকারীরা বারবার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তাদের অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে চাইলেও, পুলিশ বাহিনীর তৎপরতা ও পেশাদারিত্বের কাছে তা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, এত তৎপরতা সত্ত্বেও কেন এই ধরনের পাচার বন্ধ হচ্ছে না? কোথাও না কোথাও প্রশাসনের ভেতরে কোনো দুর্বলতা কিংবা অসাধু চক্রের মদত পাচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা সময়ের দাবি।
সাম্প্রতিক অভিযানে পুলিশ প্রশাসনের সাহসী ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তবে একইসঙ্গে মাদক পাচারের মতো মারাত্মক সামাজিক ব্যাধিকে চিরতরে নির্মূল করতে হলে শুধু পুলিশ নয়, সমাজের প্রতিটি সচেতন নাগরিককেও সামনে এসে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া এই মাদক চক্রের বিরুদ্ধে এখনই জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা দরকার। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোরও উচিত নির্বাচনের সময়কালীন কড়া নজরদারি বজায় রাখা যাতে কোনো মাদক চক্র এই সময়কে কাজে লাগিয়ে গোপন পাচারের পরিকল্পনা না আঁটে।
প্রশাসন, রাজনীতি ও সাধারণ মানুষ তিন পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে কাছাড় তথা গোটা রাজ্যকে মাদকমুক্ত একটি নিরাপদ সমাজে রূপান্তর করতে। এই ধরনের সফল অভিযান আরও চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মাদক চক্রের মূল কান্ডারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক – এটাই এই মুহূর্তে কাছাড়বাসীর একমাত্র দাবি।