২০ বছরের জন্য বন্ড বিক্রি করে পুনরায় ৯০০ কোটি টাকার ঋণ নেবে অসম সরকার

ইতিমধ্যেই অর্থ বিভাগ এই মর্মে রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এই নিয়ে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকারের এটি দ্বিতীয় ঋণ গ্রহণ। এর আগে, অর্থবর্ষের প্রথম মাসে অর্থাৎ ২২ এপ্রিল, সরকার ৯০০ কোটি টাকার একটি ঋণ নিয়েছিল।

বর্তমানে অসম সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এই পরিমাণ ঋণ শুধু যে অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট করছে তাই নয়, বরং সুদের বোঝাও রাজ্যের রাজকোষে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একের পর এক ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের আর্থিক রণকৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ভোটের আগে একদিকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টা, অপরদিকে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকারের নির্ভরতা শুধুমাত্র ঋণের ওপর—এই প্রবণতা আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তখন মনে হয়েছিল রাজ্যের উন্নয়ন পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু বিনিয়োগের সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই সরকার পুনরায় একের পর এক ঋণ নিতে শুরু করায় সেই আশার জায়গায় ভর করেছে প্রশ্নচিহ্ন।

২০১৬ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্য সরকারের ঋণ ও সুদের হিসাব এক বিপুল অঙ্কে গিয়ে ঠেকেছে। গত আট বছরে রাজ্য সরকারকে শুধুমাত্র সুদের খাতেই ৪২,০৬১ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। এর মধ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের পাঁচ বছরে সরকার সুদের জন্য খরচ করেছিল ১৯,৬৫১ কোটি টাকা। অথচ বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মাত্র তিন বছরে সেই অঙ্ক ছাপিয়ে গিয়েছে।

বর্তমান সরকারের সময়ে সুদের জন্য ইতিমধ্যেই ২২,৪১০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। এই হিসাব থেকেই স্পষ্ট, ঋণের পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনই সুদের বোঝাও এক ভয়ানক হারে বেড়েছে। প্রতি অর্থবর্ষেই রাজস্ব আয়ের বড় একটি অংশ কেবল সুদের খাতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে, যা উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়যোগ্য অর্থের পরিমাণকে সীমিত করে দিচ্ছে।

বিনিয়োগ সম্মেলনের পর রাজ্যবাসী আশা করেছিল, বহুদিন পরে এবার রাজ্যে শিল্প আসবে, কর্মসংস্থান হবে, রাজস্ব আয় বাড়বে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সরকার তার নিজস্ব খরচ মেটানোর জন্য আবার ঋণের দ্বারস্থ হচ্ছে। ফলত, ‘উন্নয়ন’ শব্দটি শুধুই সরকারি প্রচারে সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও রাজ্য সরকারের এই ঋণনীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনায় মুখর। তাদের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নানা প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং প্রশাসনিক ব্যয় সামলাতে সরকারের এই ঋণ নেওয়ার তাড়াহুড়ো। জনগণের করের টাকায় সুদ শোধ করতে শোধ করতে শেষ পর্যন্ত উন্নয়ন ব্যয় সংকুচিত হয়ে পড়বে।

বিপুল ঋণ এবং সুদের ফাঁদ থেকে রাজ্যকে মুক্ত করার জন্য কোনও দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা সরকারের হাতে নেই বলেই মনে করছে বিরোধীরা। অতএব প্রশ্ন উঠছে, এই ধারাবাহিক ঋণগ্রহণ কি রাজ্যের ভবিষ্যতের উপর এক গভীর সংকটের ছায়া ফেলছে না?

বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের ঘোষণা যতই হোক, সরকার যদি তার নিজস্ব অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে না পারে, তাহলে এই ঋণ একসময় মহাবিপদ ডেকে আনবে। এখন দেখার বিষয়, আগামিদিনে রাজ্য সরকার শুধুমাত্র ঋণ নেওয়ার নীতিতে চলবে, না কি সে নিজেকে আর্থিকভাবে আত্মনির্ভর করার কার্যকরী পথ খুঁজে বের করবে।

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…