
বরাকবাণী প্রতিবেদন গুয়াহাটি ৬মেঃ ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ফের অশান্তির মেঘ! পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৫ জন পর্যটকসহ ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চরমে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে একাধিক রাজ্য সরকারকে জরুরি নির্দেশনা পাঠানো এবং ‘মক ড্রিল’-এর আয়োজন ঘিরে গোটা দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে—ভারত কি এবার যুদ্ধের পথে হাঁটছে?
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বুধবার ৭ মে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সিভিল ডিফেন্স বা কার্যকর অসামরিক প্রতিরক্ষার আওতায় ‘মক ড্রিল’ পরিচালিত হবে। এই অনুশীলনের মধ্যে থাকছে বিমান হামলার ক্ষেত্রে সাইরেন সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করা, জরুরি পরিস্থিতিতে নাগরিকদের নিরাপত্তা বজায় রাখা, বিশেষত শিক্ষার্থীদের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে প্রশিক্ষণ দেওয়া, আকস্মিক বিদ্যুৎ বিভ্রাটে করণীয় ঠিক করা, এবং দ্রুত উদ্ধার পরিকল্পনার অনুশীলন।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, এই অনুশীলনের অংশ হিসেবে ‘ক্র্যাশ ব্ল্যাকআউট’ ব্যবস্থা চালু করা হবে, অর্থাৎ শহরের আলো সম্পূর্ণ নিভিয়ে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যাতে শত্রুপক্ষ কোনও অবস্থান নির্ধারণ করতে না পারে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগাম সতর্কতায় গোপন রাখা এবং সম্ভাব্য স্থানান্তর পরিকল্পনার অনুশীলনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই নির্দেশনার পরই গত রবিবার পাঞ্জাবের ফিরোজপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় এক পরীক্ষামূলক ব্ল্যাকআউট ড্রিল চালানো হয়। রাত ৯টা থেকে ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পুরো অঞ্চল অন্ধকারে ডুবে ছিল। স্টেশন কমান্ডার এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই মহড়ায় পুলিশ ও প্রশাসন সম্পূর্ণ সজাগ ছিল। ফিরোজপুর থানার এসএইচও গুরজন্ত সিং জানান, এই ড্রিলের মাধ্যমে জরুরি পরিস্থিতিতে শহর কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, তা যাচাই করা হয়।

পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের তরফে একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীকে ‘প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা’ গ্রহণের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক স্তরে চাপ দিতে সিন্ধু জলচুক্তিকে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তও কার্যকর হয়েছে।
বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকও পাকিস্তান থেকে আসা সমস্ত পণ্যের আমদানি ও পরিবহণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সরকার এই হামলার পর একটি সর্বদলীয় বৈঠক আয়োজন করে, যেখানে বিরোধী দলগুলিও সরকারের সম্ভাব্য প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানায়।
কেবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটির বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, এই হামলা সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান থেকেই পরিচালিত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ও উন্নয়নের পথে দেশকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই—এ কি শুধুই প্রতিরক্ষা সচেতনতার অংশ, নাকি যুদ্ধের প্রস্তুতি? যদিও সরকারিভাবে যুদ্ধের কোনও ঘোষণা হয়নি, তবুও পরিস্থিতির গতি প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, ভারত এবার আর নরম মনোভাব দেখাতে রাজি নয়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সেনা, পুলিশ, প্রশাসন—সব স্তরেই তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ‘মক ড্রিল’ শুধুমাত্র সতর্কতা নয়, বরং এক প্রকার মানসিক ও প্রশাসনিক প্রস্তুতির অঙ্গ। যদিও সাধারণ মানুষ এখনও যুদ্ধের আতঙ্কে ভুগছে না, তবে যেভাবে বিভিন্ন স্তরে প্রতিরক্ষামূলক অনুশীলন চলছে, তাতে মনে হচ্ছে ভারত এবার যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।
পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে বারবার ভারতের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার প্রচেষ্টায় এবার কেন্দ্র আর কড়া প্রতিক্রিয়ায় পিছপা নয়। যুদ্ধ হবেই—এমন জোরালো বার্তা না থাকলেও, যুদ্ধ-প্রস্তুতির ছায়া গোটা দেশেই অনুভূত হচ্ছে। এখন শুধু সময় বলবে, কূটনীতির পথেই সমস্যার সমাধান হবে, না কি যুদ্ধই হবে চূড়ান্ত উত্তর।