
বরাকবাণী প্রতিবেদন বড়খলা ৪ মেঃ গণতন্ত্রের মন্দিরে প্রবেশ করতে গিয়ে যখন সাধারণ মানুষকেই জীবন হাতে নিয়ে চলতে হয়, তখন উন্নয়নের বড় বড় বুলি কেবল ঠুনকো বুলি বলেই প্রতীয়মান হয়। পঞ্চায়েত ভোটের দিন বড়খলার চেছরি-গণিগ্রাম পূর্ত সড়ক যেন নিজের করুণ চেহারা খুলে ধরল। দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত, বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকা এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি আজ শুধুই জনদুর্ভোগের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিন ভোট দিতে গিয়ে এই সড়ক দিয়েই যাতায়াত করতে গিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন ভোটাররা। একদিকে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় উৎসাহ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভোট দিতে ছুটে গেছেন বড়খলার মানুষ, অপরদিকে তাঁদের পদে পদে পড়তে হয়েছে ভোগান্তির জালে। চেছরি-গণিগ্রাম সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতির বন্যা বইলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিধায়ক মিসবাহুল ইসলাম লস্কর বারবার আশ্বাস দিলেও সেই আশ্বাস মিথ্যাশ্রুতিতেই রয়ে গেছে।
সড়কটির চেছরি অংশের একাধিক জায়গা নদীভাঙনের কবলে পড়ে বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে। বর্ষা নামলেই এই ভাঙন আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। ভাঙনের ঠিক পাশ দিয়েই স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ ও রোগী নিয়ে গাড়ি যাতায়াত করে। সামান্য অসাবধানতায় ঘটে যেতে পারে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। অথচ, প্রশাসন কিংবা পূর্ত দপ্তরের তরফ থেকে কোনো সতর্কতা বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দেখা যায় না।
সড়কের অবস্থা এতটাই করুণ যে কোথাও কোথাও গর্তের গভীরতা পুকুরের মতো। একটু বৃষ্টি হলে জল জমে পথঘাট কাদায় ভরে যায়। যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এমনকি, চিকিৎসা পরিষেবাও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে এই রাস্তায়। রোগীবাহী গাড়ি সময়মতো হাসপাতাল পৌঁছতে না পারায় অনেক সময় রোগীদের পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে উঠছে।
এলাকার জনগণের অভিযোগ—নির্বাচনের সময় বিধায়ক মিসবাহুল ইসলাম লস্কর সহ অন্যান্য শাসকদলের নেতারা উন্নয়নের আশ্বাস নিয়ে হাজির হন। নানা প্রকল্প, রাস্তাঘাট উন্নয়নের কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ হয় না। ভোট পেরোলেই তাঁরা অন্তর্হিত হয়ে যান।
এলাকাবাসী বলছেন, যতবার দাবি জানানো হয়েছে, ততবার আশ্বাস পেয়েছি। কিন্তু রাস্তাটি মেরামতের কাজে একটি ইটও রাখা হয়নি। বারবার শুধু কথার বুলি শুনে ক্লান্ত আমরা। বড়খলার মানুষের ধৈর্যের বাঁধ আজ ভাঙার মুখে। এবার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে বৃহত্তর গণআন্দোলনের পথে হাঁটার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন এলাকাবাসী। তাঁদের দাবি, কেবল ভোটের সময় ব্যবহার করে ফেলে রাখার রাজনীতি আর বরদাস্ত করা হবে না।
একজন প্রবীণ শিক্ষক জানান, আমাদের অঞ্চলের উন্নয়ন শুধু কাগজে-কলমে। বাস্তবে নেই। আর আমরা নীরব থাকব না। যে রাস্তায় প্রতিদিন শিশুরা স্কুলে যায়, রোগী হাসপাতালে যায়, সেই রাস্তা এমন বিপজ্জনক অবস্থায় থাকলে আমরা কার ওপর ভরসা করব? একটি সড়ক কেবলমাত্র ইট-পাথরের গাঁথনি নয়, এটি মানুষের জীবন ও জীবিকার রক্তস্রোত। সেই সড়ক আজ উপেক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছে। বড়খলার চেছরি-গণিগ্রাম পূর্ত সড়কটির করুণ দশা প্রমাণ করছে—এই অঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনা আসলে কতটা ফাঁপা এবং জনবিচ্ছিন্ন।
এদিকে এলাকার ভোক্তভোগী মানুষের অভিযোগ, ভোটের সময় এলে বিরোধী দলের বিধায়ক মিসবাহুল ইসলাম ও শাসক দলের নেতা-কর্মীরা একের পর এক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হন। কিন্তু ভোট মিটতেই তাঁরা যেন গায়েব হয়ে যান। বড় বড় কথা শুনে আমরা ক্লান্ত। কাজ কিছু হয় না।
একজন জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব শুধু ভোটে দাঁড়ানো নয়, মানুষের ন্যূনতম চাহিদাগুলির দিকে নজর দেওয়াও তাঁর কাজ, ক্ষোভে বলেন এক প্রবীণ ভোটারও। স্থানীয়দের বক্তব্য, জেলা প্রশাসন এবং পূর্ত বিভাগের উদাসীনতাও এই সংকটের অন্যতম কারণ। বহুবার স্মারকলিপি জমা দিয়েও ফল মেলেনি।
জনগণের প্রশ্ন—আর কতদিন এই অবহেলার শিকার হবেন তাঁরা? আর কত প্রতিশ্রুতির প্রতারণা সহ্য করতে হবে? এখনই যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলনের পথে হাঁটার হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন তাঁরা। বিধায়ক মিসবাহুল ইসলাম লস্কর ও জেলা প্রশাসনের কাছে এখন প্রশ্ন একটাই—আর কতটা দুর্ভোগের প্রমাণ দিলে জেগে উঠবেন তাঁরা? আর কতগুলি নির্বাচনের পরে কাজের সূচনা হবে?