
শিবন নাথ বরাকবাণী প্রতিনিধি হাফলং ৪ মেঃ ডিমাহাসাও—প্রকৃতির কোলে অবস্থিত এক মনোরম পাহাড়ি জেলা। কিন্তু এখানকার জনগণের জীবন বর্তমানে প্রকৃতির রূপে নয়, বরং বাজারের আগুনে জ্বলছে প্রতিনিয়ত। জেলার প্রতিটি হাটবাজারে যেন নেমে এসেছে সবজির মূল্যবৃদ্ধির এক ভয়াবহ দুর্যোগ। হাফলং, মাহুর, লাংটিং, হজাই সহ প্রত্যেকটি বাজারে চিত্র প্রায় এক—সবজির দাম শুনে চোখ কপালে উঠছে সাধারণ মানুষের।

বাজারে যিনি যাচ্ছেন, হাতে ব্যাগ নয়, যেন আতঙ্ক নিয়ে ঘুরছেন এক দোকান থেকে অন্য দোকানে। লক্ষ্য একটাই—সস্তায় কিছু কিনে ঘরে ফেরা। কিন্তু বর্তমান বাজারদরের চিত্র দেখে সেটা যেন এখন শুধুই এক মিথ্যে আশ্বাস। অধিকাংশ সবজি ১০০ টাকার নিচে পাওয়া দুষ্কর। কাঁচা লঙ্কা ৩০০-৪০০ টাকা, করলা ১২০, ঝিঙে ৯০, ঢেঁড়শ ১০০, পটল ১০০, বেগুন ৯০, পেঁয়াজ ৫০-৬০, আর আলু ৪০-৫০ টাকা কেজি—দামের এই তালিকা শুনেই হকচকিয়ে যাচ্ছেন মানুষ। একজন গৃহবধূ বললেন, এই বাজারে দাঁড়িয়ে নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে।
আগে যা ২০-৩০ টাকায় মিলত, এখন সেখানে ১০০ টাকা দিয়েও কিছু জোটে না। এক প্রবীণ চাকরিজীবী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, জীবন কেমনে চলবে বুঝতে পারতেছি না। চাল, ডাল বাড়ছে একদিকে, আরেকদিকে সবজির এমন দাম, আমরা তো মাঝখানে পিষে যাচ্ছি।
কিছু বিক্রেতার দাবি, পাহাড়ি এলাকায় পরিবহন খরচ বেশি, উৎপাদন কম, তাই দাম বাড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ করেই কেন এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি? ক্রেতাদের মতে, প্রকৃত সমস্যা হলো প্রশাসনিক নজরদারির অভাব। বাজারে নেই সরকারি মূল্য তালিকা, নেই মনিটরিং ব্যবস্থা। ফলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফার লোভে দাম বাড়িয়ে চলেছেন ইচ্ছেমতো।

এক বাজার বিশ্লেষকের মতে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতি হাটবাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারিত মূল্যতালিকা থাকা উচিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এসব নিয়ম যেন কাগজেই সীমাবদ্ধ। এই জ্বলন্ত সমস্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের কোনো সক্রিয় উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি। নেই মোবাইল কোর্ট, নেই নিয়মিত বাজার মনিটরিং। ক্রেতারা মনে করছেন, প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তাই ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করছে দাম বাড়াতে। অনেক সচেতন নাগরিক অভিযোগ করেছেন, একশ্রেণির ব্যবসায়ীর সঙ্গে কিছু প্রভাবশালী মহলের অশুভ আঁতাত রয়েছে—যার ফলে প্রশাসন নির্বিকার।
জেলার মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। তাদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির এই মূল্যবৃদ্ধি হয়ে উঠেছে এক ভয়ানক যন্ত্রণার নাম। যাদের মাসিক আয় সীমিত, তারা বাধ্য হচ্ছেন একবেলা খাবার কমাতে। এক দরিদ্র দিনমজুরের স্ত্রী জানালেন, সবজি আর কিনতে পারি না।

এখন শুধু ভাত, লবণ আর ঝালেই চলি। জেলার শিক্ষক, সমাজকর্মী, ডাক্তারসহ সচেতন নাগরিকরা এই পরিস্থিতি দেখে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এই অবস্থায় দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ না এলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ডিমাহাসাওয়ের সবজির বাজার যেন আজ এক অঘোষিত সংকটের নাম।
এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। একদিকে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে প্রশাসনের নিস্পৃহতা—এই দুইয়ের চাপে ধীরে ধীরে দমবন্ধ হয়ে আসছে হাজারো পরিবার। এখনই সময়—প্রশাসনকে মাঠে নামিয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার। না হলে ডিমাহাসাওয়ের জনগণের বনযাত্রা হয়ে উঠবে জীবনযুদ্ধ।