এপিএসসি কেলেংকারির মূল নায়ক রাকেশ পালের কালো অধ্যায় প্রকাশ্যে

হিমন্ত উক্ত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, কংগ্রেস সরকারের সময় মেয়েদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে যা করা উচিত ছিল, তা করা হয়নি। অর্থাৎ, কংগ্রেসের শাসনকালে চাকরি দেওয়ার নামে মহিলাদের সতীত্ব হরণ করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর বিরোধীরা সরব হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে কংগ্রেস দল প্রতিবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছে। রাজ্যজুড়ে কংগ্রেস বিষটির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জেলায় জেলায় মামলা দায়ের করছে।

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘অসমের নারী সমাজের অপমান’ বলে কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদের পর বিজেপি দল এবং মন্ত্রী-বিধায়কদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শাসকদল পুরো বিষয়টিকে নিয়ে কংগ্রেস রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করে এর সমর্থনে যুক্তি উপস্থাপন করেছে। তারা মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের সমর্থনে বিপ্লব শর্মা কমিটির প্রতিবেদনের নির্দিষ্ট পৃষ্ঠার কথা উল্লেখ করেছে।

মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে প্রদেশ কংগ্রেসের উত্থাপন করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা। মন্ত্রী বলেন, এপিএসসি নিয়োগ কেলেংকারি সম্পর্কে বিচারপতি বিপ্লবকুমার শর্মা কমিটির প্রতিবেদন না পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিষবাষ্প ছড়ানো কংগ্রেস অসমীয়ার অপমান করা বন্ধ করুক।

অসমের শিক্ষিত যুব প্রজন্মের স্বপ্ন ও প্রতিভাকে লাঞ্ছিত করা রাকেশ পাল-এর চরিত্রের অধঃপতনের কথা তার মা-ও দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন ওই প্রতিবেদনে। তাই এমন একজনের জন্য অসমের স্থিতিশীল পরিবেশকে অসামাজিক কথায় বিনষ্ট করা উচিত নয়।

অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মন্ত্রী জয়ন্ত মল্লবরুয়া সামাজিক মাধ্যমে বলেন, ‘দুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী এপিএসসি কেলেংকারির তদন্তকারী বিচারপতি বিপ্লবকুমার শর্মা কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকা রাকেশ পাল-এর মা এবং অন্যান্য সাক্ষীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে কংগ্রেসের শাসনামলে অসমীয়া মহিলাদের চাকরি পাওয়ার জন্য অন্য পন্থা নিতে বাধ্য করা হয়েছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে বিকৃত করে কংগ্রেস নেতৃত্ব এখন অসমের যুবতী-মহিলাদের প্রতি চরম উপহাস ও অপমান প্রকাশ করে তাদের কলুষিত মানসিকতা উন্মোচন করছে।

তিনি আরও বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি বারবার এপিএসসি কেলেঙ্কারির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানানো কংগ্রেস এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কার্যত অসহায় অবস্থায় পড়েছে। যার জন্য তারা এই প্রসঙ্গে অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিরোধীদের মতো দায়িত্বশীল স্থানে অবস্থান করেও তারা প্রতিবেদন ভালোভাবে অধ্যয়ন না করে অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়েছে।

জয়ন্তের কথায়, কমিটির প্রতিবেদনে কিছু অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি এবং সাক্ষ্যের মন্তব্যের বিষয়ে উল্লেখ আছে যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অর্থের লেনদেনের পাশাপাশি কিছু যুবতীকে খারাপ পথে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে রাকেশ পালের মায়ের মন্তব্যের বিষয়েও উল্লেখ আছে যে তিনি বলেছেন, তাঁর পুত্রের চরিত্রের পতন ঘটেছে।

অন্যদিকে কংগ্রেসের এই প্রতিবাদের পর সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে রাজ্য বিজেপি। বিজেপির ফেসবুক পেজে বলা হয়, এপিএসসি কেলেংকারি সংক্রান্ত বিচারপতি বিপ্লব শর্মা কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যসমূহ দেশ ও জাতির বিবেক জাগ্রত করার জন্য যথেষ্ট। এই প্রতিবেদনে এপিএসসি-র তদানীন্তন চেয়ারম্যান রাকেশ পালের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জঘন্যতম দিকগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

বিশেষ করে রাকেশ পালের ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়ে তাঁর মায়ের স্বীকারোক্তি অত্যন্ত গম্ভীর এবং বেদনাদায়ক। রাজ্য বিজেপি কংগ্রেসকে প্রশ্ন করে বলছে, এখন প্রশ্ন হলো-এই সমগ্র কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয়েছিল কংগ্রেস সরকারের সময়। সেই সময়ের শাসক দল হিসেবে কংগ্রেসের ওপর দায় দেওয়া একেবারে যুক্তিসঙ্গত। তবু কংগ্রেস এখনও মুখ ঢাকতে চেষ্টা করছে এবং অপপ্রচারের মাধ্যমে এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চায়।

অসম লোকসেবা আয়োগের ভয়াবহ কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত বিপ্লব শর্মা কমিটির প্রতিবেদনে উন্মোচিত হয়েছে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই কেলেংকারির অন্যতম মুখ্য অভিযুক্ত তথা পরবর্তী সময়ে রাজসাক্ষী হয়ে ওঠা ডাঃ মৃগেন শইকীয়া তাঁর স্বীকারোক্তিতে বহু বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছেন।

প্রতিবেদনে তারও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ডাঃ শইকীয়ার স্বীকারোক্তিতে এই কথা উন্মোচিত হয়েছে যে রাকেশ পাল চাকরি প্রার্থী কিছু মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। যার জন্য তাঁর মা নিজের সন্তানের চরিত্রের স্খলন ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছেন।

আসলে রাকেশ পালের অবৈধ সম্পর্কের বিষয়ে তাঁর মা এবং স্ত্রী অবগত ছিলেন। যার জন্য স্ত্রী রাকেশ পাল থেকে দূরে থাকতেন। চাকরি দেওয়ার নামে লোকসেবা আয়োগের অধ্যক্ষ থাকার সময় রাকেশ পাল টাকা এবং নারীর যে বাজার খুলেছিলেন, সেই বাজারের অন্যতম অংশীদার ছিলেন সেই সময়ের আয়োগের সদস্য সামেদুর রহমান। লোকসেবা আয়োগকে ব্যক্তিগত ভোগের মাধ্যম হিসেবে রূপান্তরিত করা এই দালাল চক্রের বহু নিকৃষ্ট এবং অকথিত দালালি প্রাক্তন বিচারপতি বিপ্লবকুমার শর্মার তদন্ত প্রতিবেদনে উন্মোচিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অসম লোকসেবা আয়োগ ২০১৪ সালে ১৮০টি পদের জন্য সংযুক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা (সিসিই) অনুষ্ঠিত করেছিল। এই পরীক্ষায় রাকেশ পাল বাহিনীকে টাকা এবং নারীর মাধ্যমে সন্তুষ্ট করে ভূয়া চাকরি লাভ করা প্রার্থীদের ১০৮০টি উত্তরপত্র ডিব্রুগড় পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছিল। ২০১৪ সালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের এই উত্তরপত্রগুলির মধ্যে ৮৮টি ভূয়া উত্তরপত্র উদ্ধার করা হয়েছে এবং এর মধ্যে ২২ জন প্রার্থী চাকরি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। বহু উত্তরপত্রে পরীক্ষক, স্ক্রুটিনাইজার ইত্যাদির ভূয়া স্বাক্ষর ছিল। তার চেয়েও বড় কথা, বহু উত্তরপত্রে কারও কোনও স্বাক্ষরই ছিল না এবং আলাদা করে লেখা উত্তর উত্তরপত্রে সংযুক্ত ছিল।

কমিশনের সামনে এবং পুলিশের কাছে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গ্রেফতার হওয়া প্রার্থীরা যে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন, তাতে তাঁরা স্পষ্টভাবে বলেছেন, জালিয়াতি, প্রতারণা এবং দালালি সব প্রক্রিয়ায় রাকেশ পাল-এর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন সামেদুর রহমান।

প্রতিবেদনে এই কথাও উল্লেখ আছে যে কমিশনের সদস্য হিসেবে সামেদুর রহমান ২০১৩ সালের পরীক্ষাতেও একই ধরনের জালিয়াতি এবং দালালিতে জড়িত ছিলেন। কমিশনের চাকরির জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে নির্বাচিত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত সামেদুর রহমান রাকেশ পাল-এর সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন এবং তাদের আলোচনার মাধ্যমেই চাকরির বিশাল জালটি পাতা হয়েছিল।

রহমান তাঁর দুই নিরাপত্তারক্ষীর মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা এবং অন্যান্য সুবিধা সংগ্রহ করেছিলেন। রাকেশ পাল এবং সামেদুর রহমানের পাশাপাশি এই জঘন্য সিন্ডিকেটের তৃতীয় সদস্য ছিলেন আয়োগের আরেক সদস্য বসন্তকুমার দে।

Related Posts

হাসিনার বিদায়ে থেমে গেল ঢাকা-দিল্লি সমঝোতা, বিকল্প রুটে জোর ভারত সরকারের, উত্তর-পূর্ব ভারতের দরজা খুলবে রাখাইন-কালাদান করিডর?

বরাকবাণী প্রতিবেদন গুয়াহাটি ১৮ মেঃ উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের একমাত্র কার্যকরী করিডর এখনও পর্যন্ত ছিল শিলিগুড়ির ‘চিকেন নেক’। এই সংকীর্ণ ভূখণ্ডের উপর নির্ভর করেই চালান, সেনা মোতায়েন এবং…

ত্রিপুরায় থামছে না গো-চোরাচালান, ফটিকরায় পুলিশের জালে ধরা পড়লো গরু-ভর্তি ট্রাক, চালক পলাতক

পরিতোষ পাল বরাকবাণী প্রতিনিধি ধর্মনগর ৫ মেঃ রাজ্যে পাচারকালে গাড়ী ভর্তী দেশী গরু আটক করলো পুলিশ। রবিবার বিকেলে এই সাফল্য পায় ঊনকোটি জেলার ফটিকরায় থানার পুলিশ। তবে গরু সমেত গাড়ী আটক হলেও…