
বরাকবাণী প্রতিবেদন গুয়াহাটি ২রা মেঃ ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ঘোষণা করে বলেছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ১.৮৪ কোটি বন্ধকী শ্রমিককে মুক্ত করা হবে এবং তাঁদের উপযুক্ত পুনর্বাসনও নিশ্চিত করা হবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় ১৩ লক্ষ শ্রমিককে পুনর্বাসনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি আজ তার সম্পূর্ণ বিপরীত।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মাত্র ১,৪০৪ জন শ্রমিক পুনর্বাসন পেয়েছেন, গড়ে বছরে মাত্র ৪৬৮ জন। ১৩ লক্ষের বিপরীতে এই সংখ্যা কার্যত শূন্যের কাছাকাছি। ২০২১ সালে সংশোধিত বন্ডেড লেবার রিহ্যাবিলিটেশন স্কিম-এর মাধ্যমে পুনর্বাসনের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। সেখানে বলা হয়, মুক্ত হওয়া শ্রমিকদের জন্য ৩০ হাজার থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা, ঘর নির্মাণ, জমি বরাদ্দ, এমনকি পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মতো সহায়তা দেওয়া হবে।

কিন্তু এই সহায়তা পৌঁছচ্ছে না মাঠ পর্যায়ের মানুষের হাতে। কারণ—জেলা প্রশাসনের গাফিলতি। পুনর্বাসনের জন্য ‘মুক্তির শংসাপত্র’ জোগাড় করতেই শ্রমিকদের দুর্দশা চরমে। বহু জেলায় জেলা শাসকরা এই শংসাপত্র দিতে অনীহা দেখান, যার ফলে প্রকল্প কার্যত অচল হয়ে পড়ে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৮ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে মাত্র ৩.১৫ লক্ষ বন্ধকী শ্রমিককেই পুনর্বাসন দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
অথচ শুধুমাত্র গত তিন বছরে পুনর্বাসন সংখ্যা মাত্র ২,৭২৮ জন, যেখানে এক দশক আগেও এই সংখ্যাটা ছিল অনেক বেশি। অর্থাৎ, পুনর্বাসনের হার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্ধকী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ আদিবাসী ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ভুক্ত, যাঁদের পক্ষে প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে সুবিধা পাওয়াটা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে, তারা আবারও দারিদ্র্য ও ঋণের ফাঁদে পড়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে বাধ্য হন।
শ্রম বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সরকার অনেক প্রকল্প কাগজে-কলমে তৈরি করলেও বাস্তবে তা কার্যকর করতে চায় না। অনেক সময় বাজেট বরাদ্দ থাকলেও, ফান্ড ছাড় হয় না সময়মতো। আবার প্রকল্পের তদারকির জন্য মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত কর্মী নেই, নেই তথ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাও। যখন আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস উদ্যাপিত হচ্ছে, তখন এই ব্যর্থতাগুলোই আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
ভারতের ৩৯ কোটিরও বেশি শ্রমিক অসংগঠিত খাতে যুক্ত। এদের অনেকেই ন্যূনতম মজুরি, নিরাপত্তা বা স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা পান না। তার উপর বন্ধকী শ্রমিকদের পুনর্বাসনে এই গাফলতি সরকারের প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ২০৩০ সালের সময়সীমা যত এগিয়ে আসছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে—মোদি সরকারের সেই প্রতিশ্রুতি ছিল অনেকটাই কথার ফুলঝুরি। যদি এখনই প্রশাসনিক সদিচ্ছা ও কার্যকর তদারকি না বাড়ানো হয়, তাহলে আধুনিক দাসত্ব দূর করার লক্ষ্যে ভারত কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।