
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ২৬ এপ্রিল: জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর সংঘটিত নির্মম সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালো শিলচরের ইসলাম ধর্মাবলম্বী সমাজ। শুক্রবার, পবিত্র জুম্মার নামাজের পূর্বে শিলচরের ঐতিহাসিক বড় মসজিদ চত্বর এক অনন্য প্রতিবাদ কর্মসূচির সাক্ষী হয়, যেখানে শতাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলিম কালো ব্যাজ ধারণ করে ও হাতে প্লে-কার্ড তুলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হন।
এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ এবং সমগ্র দেশের মানুষের প্রতি এক দৃঢ় বার্তা পৌঁছে দেওয়া সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম নেই, এবং তা ইসলাম ধর্মের সম্পূর্ণ বিপরীত। বড় মসজিদ কমিটির সভাপতি বলেন, “আমরা গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। যেভাবে পহেলগাঁওয়ে নিরীহ পর্যটকদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে, তা বর্বরতার চূড়ান্ত রূপ। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি এই ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত চিহ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। প্রয়োজনে তাদের গৃহে গিয়ে গুলি করে নির্মূল করা হোক।

তিনি আরও জানান, “দেশের প্রায় ৪০ কোটি মুসলমান আজ এই বার্তা দিতে চায়—আমরা কোনো অবস্থাতেই সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করি না। বরং এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকার যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, আমরা তাতে সরকারের পাশে থাকবো। ধর্মের নামে যারা মানুষ হত্যা করে, তারা ইসলাম বা কোনো ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। বরং তারা ধর্মের কলঙ্ক।
প্রতিবাদকারীদের হাতে থাকা প্লে-কার্ডগুলিতে লেখা ছিল—সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম নেই, নিরীহ হত্যার বিচার চাই, শান্তির ধর্ম ইসলাম, সন্ত্রাস নয়, সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিক, নামাজের পূর্বে নিহত পর্যটকদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া পাঠ করা হয় এবং তাঁদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করা হয়। সভাপতি বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি—তিনি যেন নিহতদের জান্নাত নসিব করেন এবং তাঁদের পরিবারকে এই গভীর দুঃখ সইবার শক্তি দেন।
এই কর্মসূচি ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং সামাজিক দূরত্ব ও শৃঙ্খলার মধ্যে সম্পন্ন হয়। এতে সকল বয়সের মুসলমান অংশগ্রহণ করেন এবং তাঁদের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন যে, ভারতবর্ষে শান্তি, সহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য বজায় থাকবে এবং যে কোনো সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড রুখে দিতে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় সন্ত্রাসবাদীরা নিরীহ পর্যটকদের উপর গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এই ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিন্দার ঝড় ওঠে এবং কড়া নিরাপত্তার দাবি জোরালো হয়। এই প্রেক্ষাপটে শিলচরের বড় মসজিদ কমিটির এই প্রতিবাদ কর্মসূচি একটি শক্ত বার্তা পাঠাল—দেশের মুসলিম সম্প্রদায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, মানবতার পক্ষে। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিল, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ন্যায়ের পক্ষে তারা সরকার ও দেশের সাধারণ মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকবে।