
বরাকবাণী প্রতিবেদন লক্ষ্মীপুর ১২ এপ্রিল: এক সময়ের গর্ব, শক্তির প্রতীক এবং রাজনৈতিক মেরুদণ্ড হিসেবে চিহ্নিত লক্ষীপুর আজ যেন কংগ্রেসের জন্য শুধুই স্মৃতি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে যেভাবে কংগ্রেসের ছায়াও পরিলক্ষিত হয়নি, তা শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের জন্যও সংকেত দিচ্ছে যে, দলটি আজ শুধুই অতীত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত দিনে প্রয়াত বিধায়ক ও মন্ত্রী দীনেশপ্রসাদ গোয়ালার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে লক্ষীপুরে কংগ্রেসের ছিল দুর্দান্ত দাপট। তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র রাজদীপ গোয়ালাও কিছুটা সেই জায়গা ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় নেতৃত্বের অভাব, সাংগঠনিক দিশাহীনতা এবং জনসংযোগে ভাটার টান লক্ষীপুর কংগ্রেসকে ধ্বস্ত করে দিয়েছে।
বিজেপি যখন লক্ষীপুরে মন্ত্রী কৌশিক রায়ের নেতৃত্বে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বর্ণাঢ্য মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিল, তখন কংগ্রেসের অবস্থা ছিল করুণ। গুটিকয়েক প্রার্থী নীরবে এসে মনোনয়ন জমা দিলেও দলের তরফে না ছিল কোনো জোরালো উপস্থিতি, না ছিল জনসমর্থনের ঝলক। বরং ক্যামেরার সামনে কিছু নেতার ‘আমি আছি’ গোছের উপস্থিতি কংগ্রেসের শূন্যতা ঢাকতে পারেনি। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস জেলা পরিষদের চারটি আসনে প্রার্থী দিলেও একত্রিশটি আঞ্চলিক পঞ্চায়েত আসনের অনেকগুলোতেই তারা প্রার্থীই দিতে পারেনি। এই ব্যর্থতা শুধু কৌশলগত নয়, সাংগঠনিক ভাঙনের সরাসরি প্রমাণ। এমনকি স্থানীয় কর্মীরা মুখ খুলে বলছেন, উপরমহলের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং টিকিট বণ্টনে স্বজনপ্রীতির কারণে আজ আমরা মাঠে নামার আগেই হেরে গেছি।
মন্ত্রী কৌশিক রায় কংগ্রেসের এই করুণ অবস্থাকে কটাক্ষ করে বলেন, “কংগ্রেস কোথায়? তারা প্রার্থী দেবে কীভাবে?” তিনি আরো বলেন, আমরা বিরোধী থাকাকালীন জোরালো লড়াই করেছি, প্রার্থী দিয়েছি। কিন্তু আজ কংগ্রেস কোনো ভূমিকায়ই নেই। মানুষ এখন উন্নয়নকে বেছে নিয়েছে, বিভ্রান্তিকে নয়। লক্ষীপুর কংগ্রেস এখন যেন ভগ্নাবশেষের ওপর দাঁড়িয়ে সময় পার করছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে স্থানীয় স্তর পর্যন্ত পরিকল্পনার অভাব, তরুণ নেতৃত্বকে জায়গা না দেওয়া, সাংগঠনিকভাবে জনতার সঙ্গে দূরত্ব—সব মিলিয়ে কংগ্রেস নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছে। বিজেপি একদিকে মাটি থেকে উঠে এসে জনতার আস্থা অর্জন করেছে, অন্যদিকে কংগ্রেস তার নিজের ঘাঁটিতেই মাটি হারিয়েছে।
দলের একাংশ মনে করছে, যদি এখনই নেতৃত্বে রদবদল এবং স্বচ্ছ কর্মপন্থা না আসে, তাহলে ভবিষ্যতে কংগ্রেস শুধু ব্যালটেই নয়, মানুষের মন থেকেও মুছে যাবে। কর্মীরা বলছেন, আজ যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা মাঠে নামেন না, শুধু মিডিয়ায় মুখ দেখিয়ে দায় সারেন। লক্ষীপুরে আজ কংগ্রেস অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে। একসময় যেখানে দলীয় প্রতীকই ছিল ভোট বৈতরণীর তরণী, আজ সেখানে কংগ্রেস তার প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছে না। এমন রাজনৈতিক সংকটে যদি কংগ্রেস জেগে না ওঠে, তবে আগামী দিনে শুধুই ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে এক সময়ের ‘কংগ্রেস রাজ’।