
বরাকবাণী প্রতিবেদন লক্ষ্মীপুর ১২ এপ্রিল: লক্ষীপুর এখন আর শুধুমাত্র একটি মহকুমা নয়—সম্প্রতি সম-জেলার মর্যাদা পেয়েছে এই এলাকা। আর এই নবগঠিত সম-জেলায় প্রথমবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়া হলো। শুক্রবার ছিল মনোনয়ন জমার শেষ দিন, আর সেই দিনেই লক্ষীপুরে দেখা গেল এক অনন্য চিত্র—বিজেপির শোডাউন, উৎসবের আবহ। সকালে সূর্য ওঠার আগেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে লক্ষীপুর শহর। বিজেপির প্রার্থীরা তাদের শত-শত সমর্থকদের নিয়ে হাজির হন রাজ্যের মন্ত্রী কৌশিক রায়ের বাসভবনে। চারটি জেলা পরিষদ এবং একত্রিশটি আঞ্চলিক পঞ্চায়েত আসনে মনোনয়ন জমা দিতে তাঁরা প্রস্তুত।
রীতিমতো এক বর্ণাঢ্য পদযাত্রার আয়োজন করে বিজেপি—ঢাক, ঢোল, ব্যান্ড, আবির আর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে রাস্তা। যেন নির্বাচন নয়, উৎসব চলছে! মন্ত্রী কৌশিক রায়ের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল পৌঁছায় নবগঠিত সম-জেলা কার্যালয়ে। সেখানে একে একে প্রার্থীরা জমা দেন তাঁদের মনোনয়নপত্র। পরিবেশটা যেন ছিল একপাশে উৎসব, আরেকপাশে আত্মবিশ্বাসের প্রদর্শনী।
মন্ত্রী জানান, এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলার মতো কিছুই নেই। একমাত্র একটি আসন আমরা ভ্রাতৃসংগঠন অসম গণ পরিষদের জন্য ছেড়ে দিয়েছি। বাকি সব আসনে আমাদের প্রার্থী আছে এবং জয়ের ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। তিনি কংগ্রেসকে উদ্দেশ করে কটাক্ষের সুরে বলেন, “কংগ্রেস কোথায়? তাদের প্রার্থীই দেখা যাচ্ছে না! একসময় আমরাও বিরোধী দল হিসেবে শক্ত অবস্থানে ছিলাম, কিন্তু এখন কংগ্রেস সেই জায়গাতেও নেই। এই দিনে পাপদা গাঁও পঞ্চায়েতের সব পিআরআই সদস্য ও আঞ্চলিক পঞ্চায়েত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় বিজেপি সমর্থকেরা আনন্দে মেতে ওঠেন। সম-জেলা কার্যালয়ের সামনেই খেলা হয় রঙের, ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের গন্ধ।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ উঠেছে, বিজেপির চাপ ও প্রভাব এর কারণেই তাঁরা মনোনয়ন দিতে পারেননি। তবে সেই অভিযোগও কড়াভাবে উড়িয়ে দিয়েছেন কৌশিক রায়। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, আইনের পথ খোলা আছে। অভিযোগ থাকলে প্রমাণ দিন, পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। মিথ্যে অভিযোগ করে কেউ পার পাবে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, লক্ষীপুরের এই প্রথম নির্বাচনী উৎসবে বিজেপি নিজেদের সংগঠনিক দক্ষতা ও প্রভাব স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। ভোটের আগেই তারা যে অনেকটা এগিয়ে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ঐতিহাসিক দিনে লক্ষীপুর শুধু নতুন জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেনি, দেখিয়ে দিয়েছে—নতুন পথচলায় রাজনীতিও নিতে পারে উৎসবের রঙ।