
বরাকবাণী প্রতিবেদন কাটিগড়া ২৬ জুলাইঃ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’নীতি ঘোষণা করলেও, কাটিগড়ায় বাস্তব চিত্র যেন একেবারেই উল্টো। এখানে ভূমি-জালিয়াতরা যেন বেপরোয়া গতিতে ছুটছে। প্রশাসনিক রক্তচক্ষুকেও তারা যেন “ডোন্ট কেয়ার” মোডে উপেক্ষা করছে। বিশেষত জমি রেজিস্ট্রেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া এখন যেন পুরোপুরি চলে গেছে একাংশ দালাল ও প্রতারকচক্রের দখলে।
সম্প্রতি কাটিগড়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর এক জমি জালিয়াতি চক্র। সরকারি অফিসের সিল ও সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর জাল করে লক্ষাধিক টাকার ভুয়া জমি রেজিস্ট্রেশনের ঘটনা সামনে এনেছেন স্বয়ং সাব-রেজিস্ট্রার নিজেই। ঘটনাটি সামনে আসার পর সারা অঞ্চলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কাটিগড়ার সাব-রেজিস্ট্রার জসিম উদ্দিন আহমেদ জানান, সম্প্রতি তাঁর অফিসে জমা পড়া কিছু নথি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে তিনি গুরুতর জালিয়াতির ইঙ্গিত পান।

তদন্তে উঠে আসে, ২২ মে ২০২৪ তারিখে কালাইন নাতানপুর গ্রামের বাসিন্দা ফারুক উদ্দিন বড়ভুঁইয়া এবং আব্দুল ফুরকান বড়ভুঁইয়ার মধ্যে জমি রেজিস্ট্রেশনের একটি দলিল সম্পাদিত হয়, যার সমস্তই রেজিস্ট্রেশন নম্বর, অফিসের সিল, সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর পুরোপুরি জাল। জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি এই দলিলের মুহুরি হিসেবে যিনি স্বাক্ষর করেছেন, তিনি হলেন খেলমা ষষ্ঠ খণ্ডের বাসিন্দা খালেদ আহমেদ বড়ভুঁইয়া। নিজেকে দলিল লেখক পরিচয় দিয়ে তিনি সরকারি নথিতে জাল স্বাক্ষর করেছেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।
সাব-রেজিস্ট্রারের অভিযোগ, খালেদ আহমেদ ও তার চক্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাটিগড়া সার্কল অফিস ও রেজিস্ট্রি অফিসের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এই ধরনের কাজ কেবল বেআইনি নয়, বরং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাকেও ধ্বংস করছে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, অভিযুক্তের বাড়িতে তল্লাশি চালালে বহু ভুয়া ও আপত্তিকর দলিল-নথি উদ্ধার হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি নিয়ে এই ধরনের ছিনিমিনি খেলা হলে জনগণ কাকে বিশ্বাস করবে? সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নাম করে যদি ভুয়া দলিল ঘুরে বেড়ায়, তবে এর পরিণতি ভয়াবহ। এ শুধু আইন ভাঙা নয়, এটি জনআস্থার চরম অবমাননা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, খালেদ আহমেদ বড়ভুঁইয়া কোনও সরকার স্বীকৃত মুহুরি বা দলিল লেখক নন। অথচ তিনি বারংবার নিজেকে রেজিস্টার্ড দলিল লেখক পরিচয় দিয়ে জাল দলিলে স্বাক্ষর করেছেন। তার জালিয়াতির কৌশল এতটাই নিখুঁত ছিল যে, সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর হুবহু নকল করা হয়েছে এবং অফিসের আসল সিলের কাছাকাছি একটি জাল সিলও ব্যবহার করা হয়েছে।
এই জালিয়াতি প্রশ্ন তো তোলে খালেদ আহমেদের মতো এক প্রতারক কীভাবে এতটা গভীরভাবে সরকারি কাঠামোর ভেতর ঢুকে পড়ল? সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর জাল করতে হলে সংশ্লিষ্ট অফিসের নথিপত্র ও কার্যপ্রণালি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। তাহলে কি অফিসের ভেতরে থেকেও কেউ তাকে সাহায্য করেছে?
স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের আশপাশে দালালদের অবাধ আনাগোনা দীর্ঘদিনের চর্চা। জনগণের চোখে এটা ওপেন সিক্রেট আপনি টাকা দিলে, দলিল হোক ভুয়া বা আসল, কাগজ তো পাবেনই! এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কাটিগড়া থানায় এজাহার দায়ের হলেও এখনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। জনমানসে প্রশ্ন, পুলিশের তদন্ত কতটা নিরপেক্ষ ও কার্যকর হবে? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেন, সেই কথার বাস্তবায়ন কি কাটিগড়ায় হবে?