
বরাকবাণী প্রতিবেদন কাটিগড়া, ১৬ জুলাইঃ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। অবশেষে ৫৫ দিনের বন্ধের পর খুলে দেওয়া হল বরাক উপত্যকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল গ্যামন সেতু। এই খবরে যেমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে উপত্যকার সাধারণ মানুষ, তেমনি আনন্দে উদ্বেল ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মনিপুরের সড়কপথে যাতায়াতকারী যাত্রী ও পরিবহণ ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার বিকেলে বিশেষ আয়োজনে এই সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্যের পূর্ত মন্ত্রী কৃষ্ণনেন্দু পাল এবং বরাক উপত্যকা উন্নয়ন মন্ত্রী কৌশিক রাই।
গায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারণ, নারিকেল ফাটানো ও লাল ফিতা কেটে শুরু হয় এই বহু প্রতীক্ষিত সেতুর নবযাত্রা। উপস্থিত ছিলেন কাছাড়ের জেলাশাসক মৃদুল কুমার যাদব, পুলিশ সুপার নোমান মাহাতো, এন এইচ আই টি সি এল-এর জেনারেল ম্যানেজার গৌরাঙ্গ দেওঘরে, এবং শাসক দলের একাধিক জনপ্রতিনিধি ও আধিকারিক। গত ২০ মে জরুরি সংস্কারের জন্য এই সেতু সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেতুটি বন্ধ হওয়ার পর একরকম অচল হয়ে পড়ে বরাক উপত্যকার সঙ্গে ত্রিপুরা, মিজোরাম ও মনিপুরের সড়ক যোগাযোগ। পণ্য পরিবহণ থেকে রোগী পরিবহন, প্রতিটি ক্ষেত্রে নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিল এই অঞ্চলের মানুষের।

সেতু সংস্কারের দায়িত্বে থাকা এন এইচ আই টি সি এল কর্তৃপক্ষ দিনরাত এক করে কাজ করে নির্ধারিত সময়সীমার আগেই সেতু খুলে দিতে সক্ষম হয়েছে। এদিনের অনুষ্ঠানে এ কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী কৌশিক রাই বলেন, এই প্রকল্পে এন এইচ আই টি সি এল এবং কর্মীদের আন্তরিকতা এবং দক্ষতাই প্রমাণ করেছে, সদিচ্ছা থাকলে অসম্ভব কিছুই নয়। সেতু এখন আপাতত হালকা যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
আগামী পাঁচদিন এই নিয়ম বহাল থাকবে। এরপর একদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য সেতু ফের বন্ধ রেখে যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। যদি সব কিছু সন্তোষজনক হয়, তাহলে ভারী যানবাহনের জন্যও সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পূর্ত মন্ত্রী কৃষ্ণনেন্দু পাল। উল্লেখ্য, গ্যামন সেতু কেবল একটি স্থাপত্য নয়, বরাক উপত্যকা তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের তিনটি রাজ্যের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী এক প্রধান শিরা। পণ্য, পরিষেবা, জরুরি চিকিৎসা এবং যাত্রী চলাচলের ক্ষেত্রে এই সেতুর ওপর নির্ভর করে লক্ষ লক্ষ মানুষ।

তাই সেতুটি বন্ধ হওয়া মানেই ছিল কার্যত এক সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়। সেতু পুনরায় চালু হওয়ার খবরে স্থানীয় মানুষজন থেকে শুরু করে দূরদূরান্তের যাত্রী ও চালক সমাজ গভীর স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। শিলচরের ব্যবসায়ী মিলন ধর বলেন, এই কয়েক সপ্তাহ ব্যবসার হাল একেবারে খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
এখন আবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে। ট্রাক চালক সুরেশ দাস জানান, ঘুরপথে চলতে গিয়ে অনেক সময়, তেল ও টাকা নষ্ট হচ্ছিল। এখন আবার সব ঠিকঠাক চলবে। মন্ত্রী কৌশিক রাই ঘোষণা করেন, এই সেতুর পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি স্থায়ী মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে আর কোনও কারণে সেতু বন্ধ করতে না হয়। তিনি আরও জানান, গ্যামন সেতুর বিকল্প সংযোগপথ গড়ে তোলার ভাবনা ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের পর্যায়ে চলছে।