
বরাকবাণী প্রতিবেদন কালাইন, ১৬ জুলাইঃ পুলিশ জনগণের রক্ষক এই কথাটা কি আর কালাইন থানার ক্ষেত্রে খাটে? নাকি থানার চার দেওয়ালের মধ্যেই আজ রক্ষকই ভক্ষকে পরিণত হয়েছে? কাছাড় জেলার কালাইন থানাকে ঘিরে একের পর এক বিস্ময়কর, হতাশাজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা সংবাদ শিরোনাম দখল করে নিচ্ছে।
পুলিশের গাফিলতি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, রহস্যজনক আত্মহত্যা, থানার মধ্যেই চুরি এবং দালাল বাহিনীর খোলামেলা আড্ডা সব মিলিয়ে কালাইন থানা যেন এক কলঙ্কপতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিষ্ঠান। কালাইন থানার কোয়ার্টারের ভিতরেই এক পুলিশকর্মী রহস্যজনকভাবে আত্মহত্যা করেন। এর রেশ কাটতে না কাটতেই থানার মধ্য থেকে জব্দ করা পুস্তূর বস্তা চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এই পুস্তূর বাজারমূল্য কয়েক লক্ষ টাকার কাছাকাছি। অথচ চুরির ঘটনা ঘটেছে রাতের অন্ধকারে—পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থাতেই!
সূত্র অনুযায়ী যেদিন এই চুরির ঘটনা ঘটে, সেদিন রাতে থানার মধ্যেই বসে দালালদের এক বেষ্ট পার্টি। উপস্থিত ছিলেন থানার ঘনিষ্ঠ সাধারণ মুখ তাহির আহমেদ, সুমিত নাথ, আফজল হোসেন, শাকিল, জাবির সহ একাধিক ব্যক্তি। তদন্তে নেমে কাছাড় পুলিশ গ্রেফতার করেছে পুলিশ কর্মী কাজল মহন্ত-কে। কিন্তু বড় প্রশ্ন—একজন পুলিশকর্মী একা কীভাবে চুরি করতে পারে?

চোরাকারবারির মত এমন সংঘবদ্ধ ঘটনায় একমাত্র কাজল মহন্ত-ই কি দোষী? নাকি এই গ্রেফতারই তদন্তকে আড়াল করার জন্য প্রশাসনিক নাটকের একটি পর্ব? তদন্তে কি উঠে আসবে বেষ্ট পার্টির আসল চিত্র? কালাইন থানায় দীর্ঘদিন ধরেই চলছে দালালদের অবাধ যাতায়াত। প্রতিদিন থানার বারান্দায় চলে দালালদের আসর। এসব দালালদের সঙ্গে পুলিশকর্মীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং গোপন সমঝোতার অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে বার্মিজ সুপারি জব্দ করার পরে আনুমানিক ৫০০ বস্তা চুরি হয়েছিল। সেই ঘটনার তদন্তও রহস্যজনকভাবে হিমঘরে ঢুকে যায়।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, থানায় পা রাখতেই ভয় লাগে। স্থানীয়দের দাবি, কালাইন থানায় বর্তমানে এমন একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে চোর-দালাল-মাফিয়ারা বেশি সাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করে পুলিশের তুলনায়। দালাল আতংকে আতংকিত সাধারণ নাগরিক। অনেকেই বলছেন, থানার ভিতরে ঘাঁটি গেড়ে দালালদের বসবাস, আর পুলিশকর্মীদের নির্লিপ্ততা, দুটোই যেন পুলিশ বিভাগের পেশাগত গৌরবকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে দালাল বিরোধী অভিযান রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছিল জোর কদমে। একাধিক থানার দালালমুক্ত অভিযান সাধারণ মানুষের মধ্যে আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু কালাইন থানার এই লাগামহীন কর্মকাণ্ডে প্রশ্ন উঠছে, এই অভিযান কি কালাইন পর্যন্ত পৌঁছায়নি? নাকি কালাইনের কিছু পুলিশকর্মীর ছত্রছায়ায় এখনো দালাল সিন্ডিকেট ফুলে ফেঁপে উঠছে?
সূত্র মারফত জানা গেছে, কাজল মহন্তের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দালাল পরিচয়ে থানায় যাতায়াত করে যে নামগুলো উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন, তাহির আহমেদ, শাকিল, জাবির, আফজল হোসেন, সুমিত নাথ, উবাইদুল এই নামগুলো কি তদন্তে অন্তর্ভুক্ত হবে? নাকি শুধু একজন পুলিশ কর্মীকে বলি দিয়ে গোটা সিন্ডিকেটকে আড়াল করার চেষ্টা চলবে? কালাইন থানার এই লাগামহীন দুর্নীতি শুধু পুলিশের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুন্ন করছে না, সাধারণ মানুষের আস্থা ও নিরাপত্তার মূলে আঘাত করছে। দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দালাল সিন্ডিকেট ও পুলিশকর্মীদের যোগসাজশ প্রকাশ্যে এনে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুক কাছাড় পুলিশ প্রশাসন, এটাই এখন জেলার মানুষের একান্ত দাবি।