
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ১৬ জুলাইঃ বরাক উপত্যকার মানুষের মধ্যে যখন কাটিগড়ার সেন্ট্রাল হসপিটালে এক প্রসূতির মৃত্যুর রেশ কাটেনি, তখনই আরও এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর উঠে এল শিলচর শহর থেকে। এবার মৃত্যুর মঞ্চ বেসরকারি মেডিল্যান্ড হাসপাতাল। ত্রিপুরা থেকে আগত এক রোগীকে সময়মতো চিকিৎসা না দিয়ে অবহেলার কারণে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে হাসপাতালের চত্বরেই দেখা যায় উত্তেজিত জনতার বিক্ষোভ, ক্ষুব্ধ স্লোগান, আর শোকাহত স্বজনদের আর্তনাদ। সূত্র অনুযায়ী, মৃত মহিলা ত্রিপুরা রাজ্য থেকে চিকিৎসার আশায় শিলচরে এসেছিলেন। হাসপাতালে আনা হয়েছিল তাঁকে গুরুতর শারীরিক সমস্যায়। কিন্তু মেডিক্যাল ইমার্জেন্সির এই মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন না কোনো চিকিৎসক। হাসপাতালের কর্মীরা কেবল আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন বলে অভিযোগ চিকিৎসক আসছেন,

কিন্তু সেই আশা মৃত্যুতে গিয়ে ঠেকল। রোগীর আত্মীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করা হয়, কিন্তু কোনও চিকিৎসক এগিয়ে আসেননি। পরিণামে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে হতে এক সময়ে বন্ধ ঘরেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। ঘটনার পরপরই হাসপাতাল চত্বরে শুরু হয় ব্যাপক উত্তেজনা। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ ও রোগীর আত্মীয়রা হাসপাতালের গাফিলতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন, তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি তুলছেন।
কেউ কেউ চিৎকার করে বলেন, এটা হত্যা, নিছক অবহেলা নয়। বিক্ষুব্ধ জনতার কথায় উঠে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এক নীরব নিষ্ঠুরতার ছবি, যা বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেন নিয়মে পরিণত হয়ে। বরাক উপত্যকার বহু মানুষের মত, এটি একক কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সেন্ট্রাল হসপিটাল, গ্রিন হিল, মেডিল্যান্ড, এমনকি শহরের আরও অনেক নামজাদা বেসরকারি হাসপাতাল নিয়মিত রোগী মৃত্যুর অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড়াচ্ছে।
বিশেষ করে গরিব, দুরারোগ্য রোগীরা যেন অবহেলার পরীক্ষা দেওয়ার জন্যই এইসব হাসপাতালে ভর্তি হন। জনগণের একটাই প্রশ্ন, এইসব মৃত্যুর পর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কোথায়? জেলা প্রশাসনের ভূমিকা কোথায়? তদন্ত কেবল কাগজে, দোষীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ উঠছে, প্রশাসনের একাংশের মদতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের দোষ আড়াল করতে সক্ষম হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো যেন একটা অদৃশ্য ছত্রছায়ায় অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মানুষের প্রাণের থেকে বড় হয়ে উঠেছে মুনাফা।

সোশ্যাল মিডিয়াতে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। মেডিল্যান্ড হত্যা করেছে হ্যাশট্যাগে ছেয়ে গেছে বহু পোস্ট। অনেকে বলছেন, আজ আমার বোন, কাল কার? স্থানীয় বহু নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন অবিলম্বে তদন্ত এবং লাইসেন্স স্থগিতের দাবি জানিয়েছে। জনগণের স্পষ্ট দাবি, অবিলম্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, দোষী হাসপাতাল ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক,
জেলার সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালের কার্যপ্রণালী খতিয়ে দেখতে গঠিত হোক বিশেষ টাস্ক ফোর্স, জরুরি চিকিৎসা বিলম্ব হলে হাসপাতালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের বিধান কার্যকর হোক শিলচর-সহ বরাক উপত্যকায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখন রুগ্ন নয়, মৃত্যুর কারখানা হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা। এই ঘটনার পর প্রশাসন যদি নিরুত্তর থাকে, তাহলে মানুষের একমাত্র হাতিয়ার রয়ে যাবে রাস্তাই। প্রতিবাদ যত জোরদার হবে, ততই চাপ পড়বে সেই নীরব দেয়ালে, যেটা এতদিন ধরে এই গাফিলতির আওয়াজ গিলে নিয়েছে।