
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ১৬ জুলাইঃ কালাইন-শিলচর সড়ক যেন মরুভূমিতে রূপ নিয়েছে। একদিকে প্রচণ্ড রোদ, অন্যদিকে ধুলোর ঝড়—এই দুই মিলে জনজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। মঙ্গলবার ভাঙ্গারপার বাজারে স্থানীয় জনতা ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে পথে নেমে আসে। “মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল হায় হায়!, জেলা প্রশাসন হায় হায়! এন এইচ আই টি সি এল হায় হায়! এই রকম স্লোগানে কেঁপে ওঠে আকাশ-বাতাস।
ক্ষোভ-উদ্বেগ-বেদনা মিশ্রিত প্রতিবাদের ভাষা যেন ফুঁসে উঠল এদিন। সড়কের বেহাল অবস্থার পেছনে যেমন প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা রয়েছে, তার চেয়েও বড় কারণ—প্রশাসনিক অবহেলা ও দুর্নীতির অভিযোগ। টানা বৃষ্টিপাতের জেরে গর্তে ভরে যায় সড়কের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর এন এইচ আই টি সি এল গর্ত ভরাটের কাজ শুরু করলেও, কার্যত সেটি ছিল চোখে ধুলো দেওয়া।

রাস্তার প্রকৃত পরিস্থিতির সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য না রেখেই শুধু নামমাত্র কিছু মাটি-পাথর ফেলে কাজ সারার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এর ফল এখন প্রকট। কয়েকদিনের রোদের পর রাস্তা জুড়ে ধুলোবালির এক বেসামাল ঝড় প্রতিদিন যেন সাধারণ মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস থামিয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে স্কুলগামী শিশু ও প্রবীণ নাগরিকেরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধুলোয় দোকান খুলে বসতে পারছি না। ক্রেতারা মুখ ঢেকে পালিয়ে যায়। এইভাবে কীভাবে ব্যবসা করব?
স্থানীয় জনগণ প্রশাসনকে তিনদিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে সড়কের জল নিকাশি ও ধুলো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তারা বৃহত্তর সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে নামবে। কাছাড় জেলা যুব কংগ্রেসের সহ-সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বড়ভুঁইয়া সরাসরি মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পালন না করলে, সেটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। স্থানীয়রা বলেন, ধূলিকণার কারণে শ্বাসকষ্ট, চোখে জ্বালা ও চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব মারাত্মক হারে বাড়ছে।

স্থানীয় এক চিকিৎসক জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ধূলিজনিত অ্যাজমা ও ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এতদিনের গর্ত ভরাট না হওয়া আর এখনকার ধুলো ঝড় এই দুটি চিত্রে যেন একই দুঃখগাঁথা। বৃষ্টিতে কাদা, রোদের দিনে ধুলো! রাস্তার এই বৈপরীত্য শুধু যাত্রী নয়, পরিবেশকেও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। ধূলোর কারণে আশপাশের গাছপালাও শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে।
এতো সব অভিযোগ ও প্রতিবাদের মাঝেও প্রশাসন নির্বিকার। পূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এন এইচ আই টি সি এল কর্তৃপক্ষের তরফেও নেই কোনো আশ্বাস। মন্ত্রীর দপ্তর থেকেও জনগণের ক্ষোভের জবাবে কোনো ইতিবাচক বার্তা মেলেনি। জনগণের প্রশ্ন, মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেন, বাস্তবায়ন কোথায়? এন এইচ আই টি সি এল কাজ করলো, কিন্তু মান নিয়ন্ত্রণ কি শুধুই দেখনদারি?
প্রশাসনের নীরবতা কি ব্যর্থতার প্রমাণ নয়? কালাইন-শিলচর সড়কের রাস্তার সমস্যা এটি একটি পরিকাঠামোগত বিপর্যয়। জনজীবন বিপন্ন, স্বাস্থ্য বিপন্ন, অর্থনীতি বিপন্ন এই ত্রিমুখী দহনে পুড়ছে দক্ষিণ অসমের এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এখন প্রশ্ন একটাই—সরকার কি জনগণের কণ্ঠ শুনবে, নাকি আন্দোলনের আগুনে পুড়তে দেবে নিজের দায়িত্বকে?