
বরাকবাণী প্রতিবেদন কালাইন, ১৫ জুলাইঃ কালাইন-শিলচর সংযোগকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হারাং নদীর উপর নির্মাণাধীন ভেইলী সেতু যেন প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে। এবার সেই সেতু ঘিরে প্রকাশ্যে এল এক ভয়ঙ্কর গাফিলতি ও চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ সামগ্রী চুরি গিয়েছে সেতুর মধ্য থেকেই—তা-ও আবার ভাঙ্গারপার পুলিশ ফাঁড়ির নাকের ডগায়! ফলে বড় অঘটনের আশঙ্কা তো রয়েইছে, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন উঠছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে ঘিরে।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, প্রতিদিনের মতোই বুধবার সকালে সেতু নির্মাণ কাজে নিযুক্ত শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে এসে আঁতকে ওঠেন। দেখা যায়, সেতুর একেবারে প্রাণভোমরা অংশ যে জেকের উপর সেতুর কাঠামো ভর করে দাঁড়িয়ে আছে, তার একটি হঠাৎ করে উধাও! নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে জেক কোনও সাধারণ বস্তু নয়, বরং এটি সেতুর ভারসাম্য রক্ষা এবং কাঠামো সংরক্ষণের অন্যতম ভিত্তি। এমন একটি জেক চুরি হওয়া মানেই গোটা সেতুর স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় আশঙ্কা তৈরি হওয়া।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, কোনও রকম তদারকি বা রাত্রিকালীন প্রহরা না থাকাতেই এমন দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যেখানে এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি থাকার কথা, সেখানে নির্মাণস্থলের মতো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাতে পাহারার কোনও ব্যবস্থা ছিল না এমনই দাবি স্থানীয়দের। নির্মাণকারী সংস্থা কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ধরনের স্পেশালাইজড সামগ্রী চুরি যাওয়া নিছক ঘটনাক্রম নয়, এর পেছনে কোনও পরিকল্পিত চক্র কাজ করছে বলে আমাদের সন্দেহ।
তিনি আরও জানান, এই জেক চুরি যাওয়ার ফলে সাময়িকভাবে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে সেতু নির্মাণের সময়সীমা। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে কোম্পানিকে পড়তে হবে আর্থিক জরিমানার মুখে। ঘটনার খবর জানাজানি হতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। স্থানীয় এক প্রবীণ নাগরিক বলেন, যেখানে সেতু নিয়ে হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন জড়িয়ে, সেখানে চুরির মতো ঘটনা প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা। এটা একধরনের নাশকতার চেষ্টা বললেও ভুল হবে না।
এদিকে ভাঙ্গারপার পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করা হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং সম্ভাব্য চোরচক্রের সন্ধানে জোরদার তল্লাশি শুরু হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, সেতু নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কোনও নিরাপত্তা কর্মী নিযুক্ত ছিল না কেন? কেনই বা রাত্রিকালীন নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়নি? এবং পুলিশের একেবারে নাকের ডগায় এমন কাণ্ড কীভাবে ঘটল—তা নিয়েই মূলত তৈরি হয়েছে সমালোচনার ঝড়।
একজন স্থানীয় শিক্ষক সরাসরি বলেন, যেখানে একদিকে বরাক উপত্যকার উন্নয়নের জন্য কোটি কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেখানে এই ধরণের চুরির ঘটনা গোটা প্রশাসনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। এখন দেখার বিষয়, পুলিশ প্রশাসন কতটা দ্রুততার সঙ্গে দোষীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয় এবং নির্মাণ কাজ কবে আবার সচল হয়। তবে আপাতত প্রশ্নের মুখে পড়েছে গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং চূড়ান্ত লজ্জার মুখে পড়তে হয়েছে প্রশাসনকে।
সেতু নির্মাণ থমকে যাওয়ায় আতঙ্কে ভুগছে সাধারণ মানুষ। এই সেতুই যে কালাইন থেকে শিলচর হয়ে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই মুহূর্তে মানুষের একটাই দাবি—অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সেতু নির্মাণে নিরবিচারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক প্রশাসন।