
বরাকবাণী প্রতিবেদন শ্রীভূমি, ১৫জুলাইঃ শ্রীভূমি শহরের জনজীবনের স্বস্তি ফেরাতে জেলা প্রশাসনের তরফে আজ চালানো হলো ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান। পেট্রোল পাম্প পয়েন্ট থেকে শুরু করে রেলগেট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল আজকের অভিযান। শহরের প্রাণকেন্দ্র ধরে ছড়িয়ে পড়া অবৈধ ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে এদিন কড়া অবস্থানে দেখা যায় প্রশাসনকে। সকাল থেকেই মাইকিং, ব্যারিকেড এবং টহলদারি পুলিশের তৎপরতায় গোটা এলাকা কার্যত এক অভিযানের মঞ্চে পরিণত হয়।
উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের নিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেট, পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক, অতিরিক্ত আয়ুক্ত সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। রাস্তার পাশের ফুটপাত দখল করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকানপাট একে একে গুড়িয়ে দেয় দফায় দফায় চলা এই উচ্ছেদ কার্যক্রম। শহরের ফুটপাত দখল করে চলা অবৈধ ব্যবসা বহুদিন ধরেই নাগরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি, যানজট এবং নানাবিধ বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছিল নিয়মিত। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই পুরসভা এবং জেলা প্রশাসনের তরফে একাধিকবার নোটিশ জারি করা হয়েছিল এইসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে। দোকান সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমাও নির্ধারণ করা হয়েছিল।

কিন্তু অভিযোগ, বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই এই নোটিশকে গুরুত্ব দেননি। প্রশাসনের বারংবার সতর্কতার পরেও কার্যত অনড় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। বাধ্য হয়ে আজ সক্রিয় হয়েছে প্রশাসন। ফুটপাত পুনরুদ্ধার হওয়ায় সাধারণ মানুষদের মধ্যে দেখা গেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। একজন পথচারী জানান, প্রতিদিন এখানে চলাফেরা করতে গিয়ে ভোগান্তি হতো। দোকান সাজিয়ে এমনভাবে বসে থাকতো, যেন ফুটপাতটা তাদের বাপের সম্পত্তি।
আজকের অভিযানে অন্তত কিছুটা হাঁফ ছাড়তে পারছি। আরেকজন অভিভাবক বলেন, স্কুলে ছেলেমেয়েকে নিয়ে যেতে গিয়ে ভীষণ সমস্যায় পড়তে হতো, হাঁটার জায়গা থাকত না। ফুটপাতটা তো সাধারণ মানুষের জন্য! অন্যদিকে, উচ্ছেদ হওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা গেছে ক্ষোভ এবং হতাশা। একজন সবজি বিক্রেতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কোথায় যাব এখন?
সরকার যদি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে, তাহলে আমরা খাব কী, চলব কীভাবে? এক ভ্রাম্যমাণ কাপড় বিক্রেতা বলছেন, আমরা কি শখ করে রাস্তায় দোকান বসিয়েছি? পেটের দায়ে করছি। এতদিন কেউ কিছু বলেনি, হঠাৎ করে এসে গুড়িয়ে দিচ্ছে—এটা কি ঠিক? তবে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পুনর্বাসনের প্রশ্ন পরে দেখা যাবে, আপাতত শহরের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও জনসাধারণের দুর্ভোগ কমানোই মূল লক্ষ্য।
পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করা একেবারেই অনৈতিক। এর ফলে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারেন না। আমরা আগেই নোটিশ জারি করেছিলাম, কিন্তু অনেকেই তা অমান্য করেছে। বাধ্য হয়ে আজকের অভিযান চালানো হয়েছে। অতিরিক্ত আয়ুক্ত আরও বলেন, এটি একদিনের অভিযান নয়। পর্যায়ক্রমে শহরের প্রতিটি অংশ থেকে ফুটপাত দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
যারা বারংবার আইন ভাঙছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। তবে প্রশ্ন উঠছে, এত বছরের গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই কি এই উচ্ছেদ মানবিক? শহরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানিয়েছে, অবৈধ দখল অবশ্যই অপরাধ, তবে এসব পরিবারগুলোর পেটে লাথি না মেরে যদি কোনও বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেত, তা হলে পরিস্থিতি অনেক মানবিক হতো।