
বরাকবাণী প্রতিবেদন শ্রীভুমি, ১৫ জুলাইঃ আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। সমাজে নারীদের প্রতি নজরদারির এক ঘৃণ্য সংস্কৃতি যেন এক শ্রেণির বিকৃত মানসিকতার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি এমনই এক লজ্জাজনক ঘটনার সাক্ষী থাকল আগরতলা-শিলচর যাত্রীবাহী ট্রেন। ট্রেনের মধ্যেই এক মহিলার গোপনে ছবি তোলার অভিযোগে হাতেনাতে ধরা পড়ল ধর্মনগরের বাসিন্দা আবিদুল ইসলাম নামের এক যুবক।
ঘটনাটি ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা কামরায়। সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় অভিযুক্ত আবিদুল ইসলাম বিপরীত আসনে বসা এক মহিলা যাত্রীর অজ্ঞাতসারে মোবাইলের মাধ্যমে তার ছবি তুলছিল। প্রথমে বিষয়টি খেয়াল করেন পাশের কিছু যাত্রী। তারা লক্ষ করেন, মোবাইলটি মহিলার দিকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরানো রয়েছে এবং সে একাধিকবার গোপনে ক্লিক করছে।
যাত্রীদের মধ্যে একজন সাহস করে সরাসরি আবিদুলকে জিজ্ঞেস করে, সে কেন মহিলার ছবি তুলছে? উত্তরে প্রথমে আবিদুল তা অস্বীকার করে বলেন, আমি কিছুই তুলি নাই। পরমুহূর্তে বলেন, তুলেছিলাম, ডিলিট করে ফেলেছি। এই স্ববিরোধী বক্তব্যে যাত্রীদের সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। কেউ একজন পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত করিমগঞ্জ রেলস্টেশন আসার সময় স্টাফদের এবং নিরাপত্তারক্ষীদের খবর দেয়।
করিমগঞ্জ স্টেশনে ট্রেন থামতেই অভিযুক্তকে নামিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা। ঘটনার সময় মহিলা যাত্রীটি সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তার সম্মতিতে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয় বলে জানা গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত যুবককে বর্তমানে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তার মোবাইল ফোন ফর্সেনিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হতে পারে, যাতে জানা যায়, কেবল ওই মহিলার নয়, আরও কারও ছবি সে গোপনে তুলেছে কি না। অতীতে তার বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনার পর সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ট্রেনে মহিলারা কতটা নিরাপদ? আর কতদিন এমন বিকৃত মানসিকতার লোকদের হাতে মানসিক নিপীড়নের শিকার হবেন নারীরা? স্মার্ট ফোন আজ সমাজের দর্পণ হলেও, কিছু বিকৃত মনোবৃত্তির কাছে তা নারীর ব্যক্তিগত পরিসরে হামলার অস্ত্র হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ট্রেনের মতো গণপরিবহনে যেখানে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও শালীনতা কাম্য, সেখানে এমন ঘটনা কেবল অপরাধ নয়, বরং এক গভীর সামাজিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। এদিকে করিমগঞ্জ রেল পুলিশ জানিয়েছে, মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে যদি অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে তথ্য প্রযুক্তি আইন ও নারী সংরক্ষণ আইনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।