
মইনুল হক বরাকবাণী প্রতিনিধি শ্রীভূমি ১৫ জুলাইঃ সোমবার সকাল থেকেই টুকের বাজার এলাকায় চাঞ্চল্য। দক্ষিণ করিমগঞ্জ সমষ্টির বহু বছরের পুরোনো টুকের বাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একাংশ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় আদালতের নির্দেশে। একদিকে যেমন প্রশাসনিক দিক থেকে অভিযানটি ছিল শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল, অন্যদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জনসাধারণের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া ঘটনাটিকে করে তুলেছে অত্যন্ত সংবেদনশীল। বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদের সাফ কথা, এই হাসপাতাল, এই স্কুল-মাদ্রাসাগুলি আমার বাপ-দাদার দান।
এই টুকের বাজারের মানুষ জানেন, আমরা দান করেছি, কখনো এক ইঞ্চি জমিও জবরদখল করিনি। তাঁর মতে, হাসপাতালের কোনও পক্ষ আদালতের কোনও নোটিশ পায়নি। এমনকি তিনি নিজেও কোনও মামলার বিষয়ে জানতেন না। তাঁর অভিযোগ, একতরফা রায়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে হাসপাতালের একটি অংশ যা এলাকার জন্য বড় আঘাত। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদিনী জয়মুন নেছা দাবি করেছিলেন হাসপাতালের একাংশ তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তাঁর স্বামী গনি আলীর নামে কিছু জমি ছিল যা বহু বছর আগে নদী বাঁধের সম্প্রসারণের ফলে রাস্তার সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়।
পরবর্তী সময়ে, হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হলে তিনি জমির উপর মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন। আদালত তাঁর দাবি আংশিক মেনে নিয়ে হাসপাতালের একাংশ, আনুমানিক এক জষ্টি চার লেছা অর্থাৎ প্রায় ২০ ফুট বাই ২০ ফুট জমি তাঁর বলে রায় দেয়। সেই রায়ের ভিত্তিতেই সোমবার সকাল থেকে চলে উচ্ছেদ অভিযান।
সকাল ১১টার মধ্যে টুকের বাজারে পৌঁছান করিমগঞ্জ জেলার সিনিয়র পুলিশ সুপার পার্থ প্রতিম দাস এক বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন নিলামবাজার সার্কেল অফিসার, ভূ-বাসন আধিকারিক, কানুনগো ও আমিনরা। আদালতের নির্দেশে হাসপাতালের বাউন্ডারি দেওয়ালের একটি অংশ ও এম্বুলেন্স ঘরের সামান্য অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। উপস্থিত পুলিশ ও প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে জেসিভি চালিয়ে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এলাকায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
যদিও উত্তেজনা ও জনতার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদ স্পষ্ট ভাষায় বলেন কেন আদালতের এই একতরফা রায়, কেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু জানলো না, কেন প্রশাসন আগাম জানালো না? আমার এলাকার মানুষের সম্মান, ইতিহাস, দান সবকিছুর অবমূল্যায়ন হয়েছে এই উচ্ছেদে। তিনি আরও জানান, এই ধরনের রায় শুধু হাসপাতালের নয়, গোটা সমাজের ওপর আঘাত। তাঁর মতে, আদালতের ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এমন রায় দেওয়া হয়েছে যেখানে প্রকৃত তথ্য উঠে আসেনি। সঠিক দলিলপত্র যাচাই না করেই এমন সিদ্ধান্ত সমাজে ভুল বার্তা দিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করেন, উক্ত জমিটি নিয়ে বহু বছর ধরেই বিতর্ক ছিল না। “হাসপাতাল গড়ে ওঠার পর হঠাৎ করে একজন এসে জমির মালিকানা দাবি করলো, এটা ঠিক মেনে নিতে পারছি না, বলেন এক প্রবীণ বাসিন্দা। অন্যদিকে কিছুজন জানান, আদালতের রায় মেনে চলা আমাদের কর্তব্য। যদি কেউ প্রকৃত জমির মালিক হয়, তবে তার অধিকার ফিরে পাওয়া স্বাভাবিক। এই ঘটনায় বড় প্রশ্ন উঠছে যদি আদালতের রায় থাকেই, তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা বিধায়ক আগে কেন জানলেন না? কেন আগেভাগে কোনও আইনগত প্রতিকার চাওয়া হলো না?
কেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে সম্পূর্ণভাবে অবগত করা হলো না? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত, টুকের বাজার হাসপাতালের এই ২০ বাই ২০ ফুট জমির উচ্ছেদ হয়তো ভবিষ্যতে বড় রাজনৈতিক বিতর্ক ও জনআন্দোলনের সূচনা করে দিতে পারে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, এই বার্তাই যেন পৌঁছে দিতে চেয়েছে প্রশাসন। কিন্তু পাশাপাশি, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, আগাম অবগতকরণ ও তথ্য যাচাই ছাড়া এমন কোনও পদক্ষেপ যেন জনমানসে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ সৃষ্টি না করে, তা নিশ্চিত করাও কর্তব্য।