
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ১৪ জুলাইঃ শ্রম-ঘাম-অভাবের চা-বাগানেও এখন স্বপ্নের চারা গজাচ্ছে। বরাক উপত্যকার চা-শ্রমিক সমাজের মধ্য থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা দিয়ে সেই স্বপ্নকেই মর্যাদা দিল বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বরাক উপত্যকা চা-যুব কল্যাণ সমিতি।
রবিবার শিলচরের সদরঘাট রোডস্থিত ইউনিয়নের কার্যালয়ে এক আবেগঘন ও উদ্দীপনাময় অনুষ্ঠানে এই সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সামাজিক ও শিক্ষাগতভাবে পিছিয়ে থাকা চা-শ্রমিক সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের এই সাফল্য শুধু তাঁদের নিজস্ব গর্বের বিষয় নয়, গোটা উপত্যকার কাছেই তা অনুপ্রেরণার উৎস। চা-শ্রমিক ইউনিয়নের এই মহতী উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দিশা দেখায়।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিলচরের অতিরিক্ত জেলাশাসক, প্রাক্তন বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ স্বপন শুক্ল বৈদ্য, ইউনিয়নের নেতৃত্ববৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেণির বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ। উপস্থিত অতিথিরা তাঁদের বক্তব্যে এই সাফল্যকে শুধু একাডেমিক না বলে সামাজিক জাগরণের প্রতিফলন হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। চা-বাগানের প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে, অনেকেই প্রথম প্রজন্ম হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে সম্মানপত্র, শিক্ষা সামগ্রী ও ফুলের তোড়া তুলে দেওয়া হয়। অনেকে আবেগে ভেসে গিয়ে বলেন, আমার বাবা-মা বাগানে কাজ করেন, তাঁদের কষ্টের দাম আজ পেলাম। উল্লেখযোগ্যভাবে, একাধিক ছাত্রী তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে জানান, তারা শিক্ষক, নার্স, সরকারি কর্মচারী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
প্রাক্তন বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা বলেন, চা-শ্রমিক সমাজ বহুদিন ধরেই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। আজকের এই ছবি বদলের প্রতীক। এই প্রজন্ম সমাজ বদলাবে। অন্যদিকে, এডিসি তাঁর বক্তব্যে বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি স্তরে এমন উদ্যোগ আরও বেশি করে প্রয়োজন।
চা-বাগানের শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষানীতির প্রয়োজন রয়েছে। চা-যুব কল্যাণ সমিতির তরফে জানানো হয়, আগামী বছর থেকে সংবর্ধনার পরিসর আরও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ প্রকল্প চালুর কথাও ভাবা হচ্ছে। ইউনিয়নের নেতৃত্ব ঘোষণা করেন, যারা উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে যেতে চায়, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা তাঁরা করবেন।