
মইনুল হক বরাকবাণী প্রতিনিধি শ্রীভূমি ১৪ জুলাইঃ করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসে যেন আগুন জ্বলছে ভিতর থেকেই। পঞ্চায়েত নির্বাচন শেষ হলেও তার রেশ যেন কিছুতেই কাটছে না, বরং উল্টে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস হয়ে কংগ্রেস কর্মীদের ভিতর প্রবল ক্ষোভ ও হতাশার আগুন ছড়াচ্ছে। দলের আদর্শ বিসর্জন দিয়ে টিকিট বিক্রির নামে লুটপাটের অভিযোগ এখন দলের মধ্যেই মুখরোচক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। ঘটনার সূত্রপাত নক্ষত্র হোটেলে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) এক গোপন বৈঠক থেকে।
যেখানে দলের প্রবীণ নেতা হাফিজ রশিদ চৌধুরী টিকিট বিতরণে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই সংঘর্ষের আবহ সৃষ্টি হয়। সূত্রের দাবি, তিনি সেখানে করিমগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক স্বপন মণ্ডলের সঙ্গে তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। কথোপকথনের উত্তাপ এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, হাফিজ রশিদ ক্ষুব্ধ হয়ে বৈঠক বর্জন করে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যান। এই ঘটনা থেকেই যেন কংগ্রেসের অন্তঃকলহের আগুনে ঘি ঢালার শুরু। অভিযোগ উঠছে—ওই সময় থেকেই করিমগঞ্জ তথা বৃহত্তর শ্রীভূমি জেলার বিভিন্ন এলাকায় কংগ্রেস টিকিট বিক্রির ছক কষা হয়। নাম মাত্র দলীয় নির্বাচন হলেও প্রকৃত অর্থে তা পরিণত হয় টাকার খেলা এবং ঘরের ছেলে ঘরে রাখার এক নগ্ন প্রয়াসে।
সবচেয়ে বিস্ফোরক অভিযোগের কেন্দ্রে যিনি রয়েছেন, তিনি শামিম চৌধুরী—দলের এক প্রভাবশালী নেতা। কংগ্রেস কর্মীদের একাংশের ভাষায়, কালডুঙ্গা খ্যাত শামিম চৌধুরী নির্বাচনের আগেই একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেন টিকিটের বিনিময়ে। এমনকি একটি ভিডিও ক্লিপ ও একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় যেখানে দেখা যাচ্ছে শামিম চৌধুরী দশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এক প্রার্থীকে টিকিট দেওয়ার চুক্তিতে ব্যস্ত।
এই ইস্যুতে শ্রীমন্ত কানিশাইল-বাশাইল জেলা পরিষদ আসনের নবনির্বাচিত সদস্য মুস্তাক আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে বলেন, শামিম চৌধুরী আমার কাছ থেকে বিশ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। এখন যখন নির্বাচনে আমি জিতেছি, তখন টাকাটা ফেরত চাই। আমি এপিসিসি, এমনকি দিল্লির এআইসিসি-তেও অভিযোগ করেছি, তবু কেন তাকে রক্ষা করা হচ্ছে?
এই অভিযোগের পরপরই করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস অফিস ইন্দিরা ভবনে ঘটে মারাত্মক নাটকীয়তা। রাইজ চৌধুরীর সমর্থকরা শামিমপন্থী মিনহাজের নেতৃত্বাধীন একটি পঞ্চায়েত পরিচালনা কমিটি গঠনের বিরোধিতা করতে গিয়ে সরাসরি ধ্বনিতে প্রতিবাদ জানান, শামিম চৌধুরী গো-ব্যাক! কালো ডুঙ্গা গো-ব্যাক!। অফিসের ভিতর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়, ধাক্কাধাক্কি ও সংঘর্ষের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে নেতাদের হস্তক্ষেপ করতে হয়। এখানেই শেষ নয়, ফরিদকোনা-আছিমগঞ্জ জিপির এপি সদস্য হিসেবে যিনি নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি শামিমের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হলো—এই কমিটির সদস্যরা নাকি বিজেপির সিদ্দেক শিবিরকে ভোট দিয়ে বোর্ড গঠন করতে চেয়েছিলেন! বিষয়টি কংগ্রেসের রাজনীতিতে বিশ্বাসঘাতকতার স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরছে। কংগ্রেস কর্মী রাজন চৌধুরী প্রশ্ন তুলেছেন, শামিম চৌধুরীর মতো বিশ্বাসঘাতক নেতারা কংগ্রেসকে ভেতর থেকে খাচ্ছে।
এদেরকে এখনই বয়কট না করলে আগামী দিনে কংগ্রেস দক্ষিণ করিমগঞ্জে অস্তিত্ব হারাবে। প্রবীণ নেতারা যেখানে কংগ্রেসের নীতি ও আদর্শের পক্ষে কথা বলছেন, সেখানে একদল সুবিধাবাদী নেতা ও তাদের অনুচররা নিজেদের পকেট ভারি করতে কংগ্রেসকে নিলামে তুলছে, এমনই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে নিচুতলার বহু নিষ্ঠাবান কর্মীর কণ্ঠে। করিমগঞ্জ কংগ্রেস এখন চরম সংকটে। ভেতরের চোরাগোপ্তা বিরোধ, টিকিট বাণিজ্য, বিজেপির সঙ্গে গোপন আঁতাত এই সব কিছুর মিশেলে আজ কংগ্রেস তার মূল ভাবমূর্তি হারাতে বসেছে। প্রশ্ন উঠছে—এইসব কালো ডুঙ্গা নেতাদের বিরুদ্ধে দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে তো এআইসিসি? নাকি জনতার আস্থা আর দলীয় নীতির অপমৃত্যুর সাক্ষী হয়ে থাকবে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস?