
বরাকবাণী প্রতিনিধি শিলচর ১২ জুলাইঃ গত ৩০ জুন বেতুকান্দির কারাড়পারে সরকারি ঘরের জিও ট্যাগিং সংক্রান্ত ঘটনায় যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, তাকে কেন্দ্র করে এবার মুখ খুলল ভারতীয় জনতা পার্টির বেরেঙ্গা-বেতুকান্দি মণ্ডলের শীর্ষস্থানীয় কার্যকর্তারা। শুক্রবার ভাগাডহরে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁরা সরাসরি অভিযোগ করেন, এই গোটা ঘটনা সাজানো, পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মূল লক্ষ্য, আসন্ন পৌর কমিশনের নির্বাচনের আগে বিজেপিকে জনগণের চোখে হেয় প্রতিপন্ন করা। সাংবাদিক সম্মেলনে কার্যকর্তারা দাবি করেন, জিও-ট্যাগিং নিয়ে যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, এটি নিছক কোনও প্রযুক্তিগত বিষয় ছিল, যার সঙ্গে দলের আদর্শ বা কোনো কার্যকর্তার ব্যক্তিগত দুর্নীতির সম্পর্ক নেই। এটি নিছকই একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ, যার মাধ্যমে সরকারি ঘরসমূহের বাস্তব অস্তিত্ব যাচাই করা হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে, বললেন গোবিন্দপুর মণ্ডল সভাপতি হিমাংশু দাস।
ঘটনার পরপরই কিছু স্থানীয় ও আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি অতিরঞ্জিতভাবে পরিবেশিত হওয়ায় কার্যকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের অভিযোগ, বস্তুত যাচাই না করেই রিপোর্ট প্রকাশ করে গণমাধ্যমের একাংশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাইছে। অথচ সত্য হচ্ছে, বিজেপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা একটি রাজনৈতিক শক্তি।
আমাদের দলে দুর্নীতির কোনো ঠাঁই নেই, ৫ নম্বর বুথের এক কার্যকর্তাকে কেন্দ্র করে যেভাবে ঘরের জিও ট্যাগ বিকৃতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে, তা বিজেপির নেতাকর্মীরা চরম অনৈতিক এবং কালিমালিপ্ত প্রচার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা স্পষ্ট করে বলেন, যদি সত্যিই দলের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে প্রমাণ মেলে, তাহলে দলই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু কেবলমাত্র রাজনৈতিক বিদ্বেষ চরিতার্থ করতে ব্যক্তিগত আক্রমণ মেনে নেওয়া যায় না।
মণ্ডল সম্পাদক রাজু দেব বলেন, পৌর কমিশনের নির্বাচনের আগেই বিজেপিকে দুর্নীতিবাজ দল হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কে বা কারা রয়েছে, আমরা তা নির্ধারণের চেষ্টা করছি। জনগণ সব দেখছে, সময়মতো তার জবাবও দেবে।
যুব মোর্চা সভাপতি মনোজিৎ রায় জানান, দলীয় কর্মীদের নামে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে এলাকার উন্নয়ন থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি এই অপচেষ্টা রুখে দাঁড়াবে। আমরা জনগণের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব। পাঁচ নম্বর বুথ সভাপতি সেলিম উদ্দিন লস্কর, দুই নম্বর বুথ সভাপতি এনামুল হক মজুমদার, সাত নম্বর বুথ সভাপতি মইনুদ্দিন লস্কর, নয় নম্বরের গোপাল দাস, বারো নম্বরের ইজার উদ্দিন মজুমদারসহ অন্যান্য কর্মীরাও বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে নিয়মিত সংযোগ রেখে আমরা কাজ করি।
আমরা নিজেরাই ওই দিন সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসে বিষয়টি খোলাসা করি। কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে সচেষ্ট।সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ একবাক্যে বলেন, বিজেপি একটি আদর্শনিষ্ঠ দল। দুর্নীতি, অনৈতিকতা, কিংবা ব্যক্তিস্বার্থের কাছে আমরা মাথা নত করব না। দলীয় গঠনতন্ত্র ও নীতি আমাদের পাথেয়।
আজ আমাদের বিরুদ্ধে যে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে, আগামী দিনে তার জবাব আমরা জনআস্থার মাধ্যমে দেব। শেষে তাঁরা স্পষ্ট করে দেন, জিও ট্যাগিং নিয়ে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও সতর্কভাবে কাজ করা হবে। তবে ষড়যন্ত্র করে দলকে কলঙ্কিত করতে এলে আমরা রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আইনি সব স্তরে জবাব দিতে প্রস্তুত। এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিজেপি বার্তা দিল, বেআইনি কাজের জায়গা আমাদের দলে নেই। কিন্তু রাজনৈতিক আক্রোশে যদি মিথ্যা রটানো হয়, তাহলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। এখন দেখার বিষয়—এই পাল্টা ব্যাখ্যার পর স্থানীয় রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়ে এবং জিও ট্যাগিং বিতর্কের আসল রহস্য আদৌ উদঘাটিত হয় কিনা।