
বরাকবাণী প্রতিবেদন কাটিগড়া, ১২ জুলাইঃ কাছাড় জেলার কাটিগড়া অঞ্চলে অবস্থিত বেসরকারি সেন্ট্রেল হস্পিটেল ফের একবার প্রশ্নের মুখে। মাত্র ২১ বছর বয়সী এক তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ওই নার্সিংহোমে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র উত্তেজনা, বিক্ষোভ আর পুলিশি হস্তক্ষেপের এক দীর্ঘ নাটক। অভিযোগ, প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকের গাফিলতির কারণেই মৃত্যু হয়েছে রমজানা বেগম নামের এক যুবতীর।
স্বজনহারা পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, এই মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী সেন্ট্রেল হস্পিটেলের ‘অদক্ষ ও বেপরোয়া’ চিকিৎসা ব্যবস্থা। কালাইন ডিগাবর রোডের বাসিন্দা আলি আহমেদ তাঁর স্ত্রী রমজানা বেগমকে শুক্রবার সকাল দশটা নাগাদ ভর্তি করেন কাটিগড়া সেন্ট্রেল হস্পিটেলে। গর্ভকালীন জটিলতা থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব নয়, সিজার করতেই হবে। এরপর দুপুর একটায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। অপারেশনের পর সন্তানের জন্ম হলেও একটি পুত্র সন্তান রোগীর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে একেবারেই কিছু বলেননি চিকিৎসকরা। আত্মীয়-পরিজনের শত অনুরোধেও মুখে কুলুপ আঁটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়, যখন নার্সিংহোমে প্রবেশ করেন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা। বিষয়টি নজরে পড়তেই রোগীর পরিবারের মধ্যে শুরু হয় জোর সন্দেহ। দীর্ঘক্ষণ ধরে আত্মীয়রা চাপ সৃষ্টি করলে শেষপর্যন্ত হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রমজানা আর নেই। এই খবরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর স্বজন ও স্থানীয় জনতা। মুহূর্তে ভিড় জমে হাসপাতাল চত্বরে। বিক্ষোভ ক্রমেই রূপ নেয় ক্ষোভে, বিক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতাল ঘিরে স্লোগান তোলে, ভাঙচুরের আশঙ্কায় তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় পুলিশকে।
এই নার্সিংহোমে চিকিৎসার নামে রীতিমতো এক ‘বাণিজ্যিক’ পন্থা অবলম্বন করা হয় বলেই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় মান ও দক্ষতা ছাড়াই রোগীদের ওপর চালানো হচ্ছে এক্সপেরিমেন্ট। প্রসূতি চিকিৎসক ড. সপ্তর্ষি চক্রবর্তী ও আর.এম.ও ডা. তাসনিমের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে মৃতের পরিবার। তাদের প্রশ্ন—অপারেশনের পরপরই কেন গোপন রাখা হলো রমজানার অবস্থার কথা? মৃত্যু ঘটলে কেন তা লুকোনোর চেষ্টা করা হলো? হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর মৃত্যু হলে তাৎক্ষণিকভাবে আত্মীয়দের না জানিয়ে পুলিশের আগমনের পরই কেন জানানো হলো?
উত্তেজনার জেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছান কাটিগড়া থানার ওসি জোসেফ ভি কেইবম, এরপর সার্কল অফিসার রবার্ট টেলোর এবং রাতে শিলচর থেকে পৌঁছান ডি.এস.পি মহেন্দ্র বরা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত সেন। দফায় দফায় আলোচনার পর কোনওক্রমে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন—উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে কেন লাঠিচার্জ? কেন রমজানার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখার পরিবর্তে জনতার কণ্ঠরোধে তৎপর হলো প্রশাসন? স্বামী আলি আহমেদ জানান, রমজানা একেবারে সুস্থ ছিল, অপারেশনের জন্য নিয়ে যাওয়ার পর আর তাকে পাইনি।
তারা আমার স্ত্রীর মৃত্যুকে লুকোতে চেয়েছে। এটা চিকিৎসা নয়, এটা খুন। পরিবারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই থানায় দায়ের করা হয়েছে লিখিত এজাহার। ময়নাতদন্তের জন্য রমজানার দেহ পাঠানো হয়েছে শিলচর মেডিকেল কলেজে। এই মৃত্যুর পরেও কি জবাবদিহি ছাড়াই চলবে কাটিগড়ার বেসরকারি নার্সিংহোমগুলোর চিকিৎসা ব্যবসা? আর কত রমজানাকে প্রাণ দিতে হবে বেসরকারি হাসপাতালের গাফিলতির বলি হয়ে? জনগণের দাবি—তৎক্ষণাৎ এই নার্সিংহোম সিল করা হোক, এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।