
বরাকবাণী প্রতিবেদন কাটলীছড়া, ১২ জুলাইঃ স্বাধীন ভারতের ৭৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও রুপাছড়া যেন এখনও আটকে আছে ব্রিটিশ যুগের পরাধীনতায়। হাইলাকান্দি জেলার কাটলীছড়া রাজস্ব চক্রের অন্তর্গত এই জনপদ আজও বঞ্চিত একটি পাকা রাস্তার সুবিধা থেকে। কথায় বলে, রাস্তা উন্নয়নের প্রথম ধাপ। কিন্তু সেই ধাপটিই যদি ৭ দশকের বেশি সময় ধরে ধূলিসাৎ হয়, তবে তা কেবল অবহেলা নয়, একটি চরম প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক প্রতারণার নগ্ন প্রমাণ। রুপাছড়ার গ্রামবাসীরা বারবার ভোট দিয়েছেন, বদলেছেন জনপ্রতিনিধি, জেলা পরিষদের বোর্ড, পঞ্চায়েত সদস্য।
কিন্তু বদলায়নি তাঁদের জীবনের চিত্র। বেহাল কাঁচা রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা মাড়িয়ে স্কুলে যায় শিশু, অন্তঃসত্ত্বা মহিলা হাসপাতালে পৌঁছাতে হলে কাঁধে তুলে খাটিয়ায় নিয়ে যেতে হয়। এমনকি সামান্য জ্বর বা সাপে কামড়ানো রোগীকেও অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে এই অপ্রবেশযোগ্য রাস্তায়। ফলে, অনেক ক্ষেত্রেই ঘটে যায় অকালমৃত্যু। অথচ সরকারি নথিতে রুপাছড়া উন্নয়নশীল গ্রাম। পঞ্চায়েত এবং গ্রাম উন্নয়ন বিভাগের অধীনে একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও তার বাস্তব রূপ আজও অন্ধকারে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রাস্তার মুখে মাত্র ১০০ মিটার এবং শেষে প্রায় ৫০ মিটার পাকা করা হয়েছে, বাকি কাজ ধামাচাপা পড়ে গেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা প্রশাসনিক জটিলতা”র অজুহাতে। অর্থের হিসেব মিললেও কাজের হিসেব নেই। দুর্নীতির যে বড়সড় খেলা এখানে চলছে, তা আর কারও অজানা নয়।
বিক্ষোভরত স্থানীয়দের বক্তব্য, ভোটের সময় নেতারা খালি হাতে আসেন না, বাড়ি বাড়ি পায়ে হেঁটে এসে বলেন, আমরাই তোমাদের রাস্তা করে দেব। কিন্তু ভোট শেষে তাঁরা আর আসেন না, ফোনও তোলেন না। এই কথাগুলি নিছক অভিযোগ নয়, বরং দীর্ঘ প্রতারণার প্রতিধ্বনি।
স্থানীয় সমাজকর্মী আজিজুল হক বলেন, যে দেশে চন্দ্রযান মহাকাশে পৌঁছায়, সেই দেশের রুপাছড়া গ্রামের মানুষ আজও অ্যাম্বুলেন্স চায় না, তারা শুধু চায় একটি চলার উপযুক্ত রাস্তা। গ্রামবাসীরা ইতিমধ্যেই বিভাগীয় মন্ত্রী এবং স্থানীয় বিধায়কের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, অবিলম্বে রুপাছড়া গ্রামে পূর্ণদৈর্ঘ্যের একটি পাকা রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা করা হোক।
প্রশাসনের তরফে যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও আশ্বাস পাওয়া যায়নি। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়—এটা কি শুধুই প্রশাসনিক ব্যর্থতা, নাকি একটি সচেতন অবহেলা যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুর্দশা দেখেও চুপ থাকে ক্ষমতাসীনরা?