
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ২৯ মেঃ ভারত সরকারের বহুল প্রচারিত ভারতমালা প্রকল্পের আওতায় শালচাপড়া ও সংলগ্ন এলাকায় জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। প্রকল্পের নামে নিরীহ ও সহজ-সরল গ্রামবাসীদের ঠকানো হচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়ায় ভয়ানক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনের আগাম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিন শালচাপড়া গ্রামের বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিন বড়ভূইয়া, নূর জামাল লস্কর, রণজিৎ দে, এনাম উদ্দিন লস্কর, সন্তোষ কুমার দাস সহ বহু মানুষ সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে দেন। তারা জানান, জমি জরিপ ও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় চরম অনিয়ম চলছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরিপ অফিসার ও পাটোয়ারী-কানুনগোরা স্বচ্ছতা তো দূরের কথা, বরং দালালদের সাথে মিলেমিশে একপ্রকার জবরদস্তি ও প্রতারণার পথেই কাজ চালাচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বসতভিটা ও আবাদি জমি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করা পরিবারগুলোকে আইনগত মারপ্যাঁচ দেখিয়ে নামমাত্র মূল্য দিয়ে জমি ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারি জরিপ কর্মকর্তারা মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে, বরং একটি চক্রের হয়ে কাজ করছেন—এমনটাই মত অনেকের।
অভিযোগ, জরিপ কাজে নিযুক্ত আধিকারিকরা রাতারাতি কিছু প্রভাবশালী ও দালালদের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে জমি কিনে নিচ্ছেন, পরে সেগুলো সরকারকে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করার ছক কষা হয়েছে। স্থানীয়রা বারংবার জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন, তবে কোনো সুরাহা মেলেনি। সাধারণ মানুষ প্রশাসনের কাছে ন্যায্য মূল্য ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার দাবি জানালেও, প্রতিবারই তারা অবহেলিত হয়েছেন বলে অভিযোগ।
গ্রামবাসীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা যেসব জমিতে বসবাস করছেন ও চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তা জলের দরে ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তাঁরা বলেছেন, আমাদের মাথার উপর ছাদ কেড়ে নিতে চাইলে আগে ন্যায্য মূল্য দিতে হবে। অন্যথায় এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না। এই চক্রান্তে জড়িত পাটোয়ারী, কানুনগো, জরিপ অফিসার ও ভূমি দফতরের একাংশ কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া তদন্ত দাবি করেছেন শালচাপড়ার জনগণ।
তাঁদের মতে, এই দুর্নীতির নেপথ্যে রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র যারা সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে লাভবান হচ্ছে। একটি উন্নয়ন প্রকল্প কখনোই সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করে হতে পারে না। শালচাপড়ার মানুষ সেই বার্তাই তুলে ধরেছেন এই প্রতিবাদের মাধ্যমে। প্রশাসনের প্রতি তাদের স্পষ্ট আহ্বান—স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ এবং দালাল মুক্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় বৃহত্তর গণআন্দোলনের দিকে যেতে তারা প্রস্তুত।