
ড. নিখিল দাশ শিলচর ২৯ মেঃ বরাক উপত্যকার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলের আনাচে কানাচে, এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা ছড়িয়ে পড়েছে বেআইনি ভুয়ো চিকিৎসক দের বেআব্রু রাজত্ব। এরা নামেমাত্র সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী হলেও বাস্তবে হয়ে উঠেছে নিজে থেকেই বিশাল ডিগ্রিধারী’ ডাক্তার। আর এদেরই কাঁধে ভরসা রাখছেন শত শত রোগী! অথচ এদের অনেকেই আসলে একজন ফার্মাসিস্ট মাত্র কাজ শুধুমাত্র চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ ও ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া।
তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। কাছাড় জেলার একাধিক সরকারি সাব সেন্টারে কর্মরত ফার্মাসিস্টদের বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ তারা সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বেআইনি ভাবে গড়ে তুলেছে ব্যক্তিগত চেম্বার, খুলে বসেছে ঘরোয়া নার্সিং হোম, চালাচ্ছে গর্ভপাত, অবৈধ এবরশন, এমনকি গোপনে অসামাজিক চিকিৎসা কার্যক্রমও।
বিশেষ করে হুসেইন পদবীধারী এক ফার্মাসিস্টের বিরুদ্ধে সম্প্রতি উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সরকারি ডিউটির বাইরে নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারে গর্ভপাত করানোর মতো মারাত্মক বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। ভুক্তভোগী এক মহিলার অভিজ্ঞতা ও শারীরিক ভোগান্তির করুণ বিবরণ রয়েছে বরাকবাণী সংবাদের হাতে, যা খুব শীঘ্রই জনসমক্ষে প্রকাশিত হবে।
বলে রাখা জরুরি, এরা সরকারের কাছ থেকে মাসমাইনে নিচ্ছেন, পরিচয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী, অথচ বাস্তবে গড়ে তুলেছেন ব্যক্তিগত অপারেশন থিয়েটার, না আছে যথাযথ চিকিৎসা সরঞ্জাম, না আছে আইনি ছাড়পত্র। শুধু নেই একটাই জিনিস ন্যূনতম মানবিকতা! জীবন নিয়ে এমন ছেলেখেলা নিঃসন্দেহে অপরাধ, তা যতই লোকের উপকার নামক বাহানায় ঢাকা দেওয়া হোক না কেন।
এই সমস্ত বেআইনি কর্মকাণ্ড চলতে পারছে বছরের পর বছর তাও সরকারি কর্মচারীদের দ্বারা তাহলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কাদের আশীর্বাদে সম্ভব হচ্ছে এমন অপকর্ম? কেন নেই নজরদারি? কাদের মদতেই ফুলে ফেঁপে উঠছে এমন মাফিয়া চিকিৎসক চক্র?
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি ব্লকে এমন একাধিক নাম রয়েছে, যারা অফিস আওয়ারে সরকারি হাসপাতাল বা সাব সেন্টারে চাকরি করলেও বিকেল হলেই ধুয়ে মুছে নিজের চেম্বারে চিকিৎসক সেজে বসেন। আছে অবৈধভাবে গড়ে তোলা নার্সিং হোম, নেই কোনো লাইসেন্স, নেই প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থার ন্যূনতম মানদণ্ড। বরাকবাণী সংবাদে খুব শীঘ্রই এদের নাম, পরিচয়, পদবী, সরকারি কর্মস্থল, এবং বেআইনি চিকিৎসা পদ্ধতির যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।
বরাক উপত্যকার মানুষ জানতে পারবেন, কার হাতে তাঁরা নিজেদের জীবন তুলে দিচ্ছেন! জনগণের জানার অধিকার এবং সমাজের স্বাস্থ্যবিধিকে রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। অবৈধ গর্ভপাতের ভয়ঙ্কর ঝুঁকি এবং রোগীর জীবনের সাথে ছিনিমিনি খেলা আর বরদাস্ত করা যায় না। প্রশাসনকে অনতিবিলম্বে এই সমস্ত বেআইনি কার্যকলাপে যুক্ত সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে
বরাকবাণী। ফার্মাসিস্ট যদি হয়ে যায় সার্জন, নার্সিং হোম যদি চলে রান্নাঘরের পাশে, আর গর্ভপাত হয় হাটে-বাজারে চেম্বারে তাহলে এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে একটা সভ্য সমাজে? এখনই সময়, মুখোশ খুলে দেওয়ার। জনগণকে সত্য জানানো, এবং কর্তৃপক্ষকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার। না হলে এই অবহেলা একদিন পরিণত হবে মৃত্যুর মিছিলে।