
মইনুল হক বরাকবাণী প্রতিনিধি শ্রীভূমি ২৯ মেঃ কান্দিগ্রাম ও মাদারপুর করিমগঞ্জ জেলার এই দুই গ্রাম যেন আস্তে আস্তে বরাক নদীর নখদর্পণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর প্রবল স্রোতে ভেঙে যাচ্ছে একের পর এক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর, বাগান। শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবেই এই জনপদের একটি বড় অংশ এখন বরাক নদীর বুকে।
বিশেষত ২০২১ সালে মাদারপুরে যখন ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছিল, তখন যদি জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা হতো, তবে আজ দৈর্ঘ্যে সাড়ে চার কিলোমিটার এবং প্রস্থে আড়াই কিলোমিটার বিস্তৃত অংশ নদীতে বিলীন হতো না। ভাঙনের ফলে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা পরিমাপ করা কঠিন হলেও, প্রাথমিক হিসেবে জানা গেছে, জমি, বাড়ি, পুকুর, বাগান ইত্যাদি সহ আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ভাঙনের শুরুর পর্যায়ে যদি অল্প কিছু টাকা খরচ করে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হতো, তবে এত বিপুল ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা যেত। আজও সেখানে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। কবে এই ভাঙন থামবে, তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এই ভাবে চলতে থাকলে আরও হাজার কোটি টাকার ক্ষতি অনিবার্য।
মাদারপুর গ্রামের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, বছর দুয়েক আগে তার ১২ কক্ষের পাকা ঘর বরাক নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে তিনি নদীর ধারে এক আত্মীয়ের জায়গায় একটি টিনের ঘরে পরিবারসহ বাস করছেন। স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে ও ছেলের বউ সবাই মিলে এক ঘরে থাকেন। ঘরের ভেতর কাপড় দিয়ে তৈরি করেছেন পার্টিশন। আমার সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে ঘরটা বানিয়েছিলাম। এখন দিন কাটছে অনিশ্চয়তার মধ্যে, কণ্ঠে ব্যথার সুর।
মালুয়ার কান্দিগ্রাম ও ইএন্ডডি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা ইতিমধ্যেই বরাক নদীর জলের নিচে চলে গেছে। এর প্রভাবে হাজার হাজার কৃষক ও দিনমজুর কার্যত গৃহহীন ও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। জমি নেই, চাষ নেই, জীবিকা নেই, জীবন যেন ধ্বংসের মুখে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কংগ্রেস নেতা জিল্লুল নূর চৌধুরী ও আহমেদ সাহিল এলাকা পরিদর্শনের পর জানান, ভাঙন যত এগোচ্ছে, ততই জনপদ ধ্বংস হচ্ছে।
কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। যেন এই দুর্যোগ কারো মাথাব্যথার বিষয় নয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ও বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এই দুই নেতা গুয়াহাটিতে চিফ ইঞ্জিনিয়ার ভাস্কর শর্মার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। স্মারকলিপিতে দ্রুত নদী বাঁধ নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানানো হয়।