
মইনুল হক বরাকবাণী প্রতিনিধি, শ্রীভূমি ২৯ মেঃ পাকিস্তান ইস্যু ঘিরে রাজনৈতিক নাটক যখন চরমে, তখনই রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন মোড় অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি (এআইসিসি) সোমবার ঘোষণা করল, আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের (এপিসিসি) নতুন সভাপতি হচ্ছেন যোরহাটের সাংসদ গৌরব গগৈ। বর্তমান সভাপতি ভূপেন বরাকে সরিয়ে এ দায়িত্বে তাঁকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেসের অন্দরমহলে শুরু হয়েছে উল্লাসের জোয়ার, বিশেষ করে যুবসমর্থকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা। সোমবার বিকেলে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল স্বাক্ষরিত এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই নিযুক্তির কথা জানানো হয়। বলা হয়েছে, গৌরব গগৈকে সভাপতি করা ছাড়াও এপিসিসিতে তিনজন নতুন নির্বাহী সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে সরুক্ষেত্রীর বিধায়ক জাকির হুসেন শিকদার, চা উপজাতি নেত্রী রোজলিনা তিরকি এবং দক্ষিণ অভয়পুরীর বিধায়ক প্রদীপ সরকার। বিদায়ী সভাপতি ভূপেন বরাকেও গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনী প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে।

এআইসিসির এই সিদ্ধান্ত যেন সরাসরি বিজেপিকে একটি কড়া বার্তা। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সাম্প্রতিক পাকিস্তান ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্যের জবাব যেন এই নিযুক্তির মধ্য দিয়েই দিয়েছে কংগ্রেস। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা হাফিজ রশিদ চৌধুরীর ভাষায়, এটি একটি মোক্ষম কৌশল, হিমন্তের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে জবাব দিলো কংগ্রেস। নিজের প্রতিক্রিয়ায় গৌরব গগৈ বলেন, আমি কৃতজ্ঞ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধী এবং কেসি বেণুগোপালের কাছে, যারা আমাকে এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আস্থা রেখেছেন।
আসামে কংগ্রেসের একনিষ্ঠ এবং অনুপ্রেরণাদায়ক নেতাদের সাথে কাজ করতে পারা আমার জন্য গর্বের বিষয়। বিহারের পাটনায় অবস্থানকালীন খবর পেয়ে তিনি একটি ভিডিও বার্তায় এই মন্তব্য করেন। নতুন সভাপতির ঘোষণার পর থেকেই কংগ্রেস কর্মীরা আনন্দে ফেটে পড়েন। গোটা রাজ্য জুড়ে বাজি ফাটিয়ে, মিষ্টি বিতরণ করে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা বার্তায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তাঁরা।
বরাক উপত্যকার তিন জেলায়ও একই চিত্র। করিমগঞ্জের ইন্দিরা ভবনের সামনে কংগ্রেস কর্মীরা বাজি ফাটিয়ে আনন্দ করেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি আবুল কালাম তাপাদার, সম্পাদক শাহাদাত আহমেদ চৌধুরী স্বপন, সুব্রত দেব, যুব কংগ্রেসের রাজন চৌধুরী, কার্য্যকারী সভাপতি আশরাফ নূর চৌধুরী, আইনজীবী মমতাজ বেগম, তন্ময় মজুমদার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
তবে লক্ষ্যণীয়, জেলা সভাপতি রজত চক্রবর্তী, শামিম চৌধুরী এবং বিশ্ব ঘোষের অনুপস্থিতি। এই বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে সংগঠনের অভ্যন্তরেই কেন এমন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে তারা অনুপস্থিত? রাজনৈতিক মহলের মতে, জেলা নেতৃত্বের মধ্যে কর্মীদের সাথে দূরত্ব ও বোঝাপড়ার অভাবই এর প্রমাণ। অন্যদিকে করিমগঞ্জ কংগ্রেসে চলছে উত্তেজনা।
বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় দলীয় টিকিট বণ্টনকে ঘিরে লেনদেনের একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। এই ঘটনায় প্রবল চাপে জেলা সভাপতি রজত চক্রবর্তী, প্রদেশ কংগ্রেস সম্পাদক আমিনুর রশীদ চৌধুরী ও বিশ্ব ঘোষ। সূত্রের খবর, নতুন সভাপতি গৌরব গগৈ দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তাদের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ জারি হতে পারে। অনেকেই বলছেন, দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে এদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে এআইসিসি।
আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে কংগ্রেসের এই নতুন নেতৃত্ব গঠন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গৌরব গগৈয়ের হাত ধরে কংগ্রেস কতটা সংগঠিতভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে, তা সময়ই বলবে। তবে এই মুহূর্তে এক কথা বলা যায়—গৌরব গগৈর নিযুক্তির মাধ্যমে কংগ্রেস যে যুদ্ধের ময়দানে নামতে প্রস্তুত, তা স্পষ্ট।