
বিমল চৌধুরী শনবিল কালীবাড়ি ২৯ মেঃ বর্ষার শুরুতেই ৫৩২ নং শান্তিপুর নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় যেন রূপ নিয়েছে এক দ্বীপ-গ্রামের চেহারায়। চারিদিকে জল থইথই, বিদ্যালয়ে পৌঁছানোর একমাত্র ভরসা এখন নৌকা। অথচ প্রতিকূলতার মাঝেও থেমে থাকেনি শিক্ষা। শিক্ষকরা যেমন নিষ্ঠাবান, তেমনি ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান ও মধ্যাহ্নভোজন নিয়মিত চলে এসেছে বহুদিন ধরে।
কঠিন সময়ে যখন জ্বালানির অভাবে পাঁচ-ছয়দিন রান্না বন্ধ রাখতে হয়, তখনও প্রধান শিক্ষক শ্রী প্রিয়জিৎ পাল নিজ উদ্যোগে বাইরে থেকে কিনে এনে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সিঙ্গারা, কেক, মেগি ইত্যাদির ব্যবস্থা করে চলেছেন শুধুমাত্র ক্ষুদে পড়ুয়াদের অভুক্ত না রাখতেই। এই চিত্র সকল অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের জানা। তাঁদের চোখের সামনে ঘটে চলেছে এই সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়।
অথচ, সম্প্রতি এক অভিভাবক তথা পরিচালনা সমিতির সদস্য প্রীতেশ দাস মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ তুলে সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন, তাতে ক্ষুব্ধ ও ক্ষতবিক্ষত হয়ে উঠেছেন বিদ্যালয়ের অধিকাংশ অভিভাবক এবং পরিচালনা সমিতির অন্যান্য সদস্যরা।
অভিযোগ, প্রীতেশ বাবু সংবাদমাধ্যমের দুই প্রতিনিধিকে নিয়ে এসে বিদ্যালয়ে “মধ্যাহ্নভোজন বন্ধ” বলে অপপ্রচার চালান, অথচ প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য যে কয়েকদিন রান্না সম্ভব হয়নি, সে বিষয়ে কোনো সত্যনিষ্ঠ ব্যাখ্যা সংবাদে তুলে ধরা হয়নি। জলমগ্ন বিদ্যালয়ের দুঃসহ পরিস্থিতির একটি দৃশ্যও নাকি দেখানো হয়নি। বরং, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে একতরফা সংবাদ পরিবেশন করে স্কুলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।
এতে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা সংবাদমাধ্যমের পক্ষপাতিত্বপূর্ণ ভূমিকায় বিস্ময় ও দুঃখ প্রকাশ করেন। প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠা অভিভাবকদের বক্তব্য, প্রীতেশ দাস বিদ্যালয়ের স্বচ্ছ ও সৎ ব্যবস্থাপনায় নিজের প্রভাব বিস্তার করতে ব্যর্থ হয়ে এখন ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে বিদ্যালয় ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এক অভিভাবক বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের সঙ্গে কেউ খেলতে চাইলে, আমরা চুপ থাকব না। স্কুল নিয়ে যারা কুৎসা রটাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ চাই।
বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতির এক সদস্য জানান, সেই দিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে আমরা আমাদের বক্তব্য রাখতে চাইলে, তাঁরা সুযোগই দেননি। শুধু এক ব্যক্তির কথায় সংবাদ পরিবেশন হয়েছে। এটা কি সাংবাদিকতার নিয়ম? গ্রামবাসীদেরও প্রশ্ন, কঠিন পরিস্থিতিতে যাঁরা শিক্ষার্থীদের মুখে খাবার তুলে দেন, তাঁরা কী করে দোষী হতে পারেন? স্কুল যে জলমগ্ন অবস্থায় চলেছে, সেই বাস্তব ছবি চেপে রেখে শুধু কয়েকদিন খাবার না পাওয়ার তথ্য বড় করে দেখিয়ে সংবাদ পরিবেশন করাটা একপেশে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় কি? অভিভাবক ও গ্রামবাসীরা একযোগে বলেন, বিদ্যালয় মানে ভবিষ্যতের কারখানা।
এখানে রাজনীতি নয়, দরকার সহযোগিতা। যারা বিদ্বেষ ছড়াতে চাইছে, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরের হস্তক্ষেপ দাবি করে অভিভাবকরা বলেন, একটি আদর্শ বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নিয়ে ছিনিমিনি খেললে তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। শিক্ষক, অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের সম্মিলিত প্রতিবাদে ফের একবার প্রমাণ হল অপশক্তির মুখোশ যতই রঙচঙে হোক না কেন, সত্যের দীপ্তি তাকে উন্মোচিত করবেই।