আলোকিত ভবিষ্যতের পথে শিলচরে ‘আলোহা মেন্টাল অ্যারিথমেটিক’, শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ

আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফিতা কেটে কেন্দ্রটির শুভ উদ্বোধন করেন শিলচর প্রেস ক্লাবের সম্পাদক শ্রী শঙ্কর দে। উপস্থিত ছিলেন টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া, বরাক ভ্যালি ব্রাঞ্চের সচিব শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য, কাছাড় জেলার বিশিষ্ট সমাজসেবক অভিজিৎ পাল, সমাজসেবী ইফতিকার আলম লস্কর, আলোহা মেন্টাল অ্যারিথমেটিকের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মুখ্য সঞ্চালক রণবীর রায়, বিশিষ্ট সমাজকর্মী সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য্য প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে আলো প্রজ্বলনের মাধ্যমে শুভারম্ভ হয় এক চিন্তাশীল আলোচনা সভার, যেখানে অতিথিরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নয়নে মানসিক বিকাশের গুরুত্ব নিয়ে মতপ্রকাশ করেন। অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করে স্বাগত জানান শিলচর শাখার মুখ্য পরিচালক ডাঃ মালবিকা চৌধুরী এবং সহ-পরিচালক নিখিল দাস।

অনুষ্ঠানে মুখ্য সঞ্চালক রণবীর রায় আলোহা প্রোগ্রামের ইতিহাস ও কার্যপ্রণালী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি জানান, ১৯৯৩ সালে মায়ানমারের লু মুন সুঙ্গ নামের এক শিক্ষানুরাগী এই প্রোগ্রামের সূচনা করেন। বর্তমানে এটি বিশ্বের ৪২টি দেশের লক্ষ লক্ষ শিশুদের মধ্যে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ‘ALOHA’ শব্দটি “Abacus Learning of Higher Arithmetic”-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

এটি শুধুমাত্র অঙ্ক শেখানোর পদ্ধতি নয়—বরং পুরো মস্তিষ্কের সমন্বিত বিকাশের একটি বৈজ্ঞানিক প্রোগ্রাম। প্রাথমিকভাবে অ্যাবাকাস (গণনাযন্ত্র) ব্যবহার করে শিশুদের গণনাশক্তি বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় শিশুদের ডান ও বাঁ মস্তিষ্ক একসাথে সক্রিয় হয়—যা স্মৃতিশক্তি, মনঃসংযোগ, সৃজনশীলতা, শ্রবণ ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা ইত্যাদি বহুমুখী দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

প্রধান অতিথি শঙ্কর দে বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শুধু পাঠ্যক্রম মুখস্থ করলেই হবে না, দরকার সমন্বিত মেধা ও মননের বিকাশ। আলোহা সেই দিকেই আলোকপাত করছে। এই ধরনের প্রোগ্রাম শিশুদের আত্মবিশ্বাস ও মেধার বিকাশে অভাবনীয় ভূমিকা পালন করতে পারে। কাছাড় জেলার বিশিষ্ট সমাজসেবক অভিজিৎ পাল বলেন, আজকের শিশুরাই আগামীর পথপ্রদর্শক। তাদের ভেতরের প্রতিভা বিকাশে এ ধরনের বৈজ্ঞানিক ও আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত দরকারি। শিলচরে এই কেন্দ্র চালু হওয়ায় আমরা গর্বিত।

আলোহা মেন্টাল অ্যারিথমেটিক শুধু গণনা শেখানোর প্রতিষ্ঠান নয়, এটি শিশুদের মাইন্ড ম্যানেজমেন্ট, স্ট্রেস রিলিফ, মাল্টি টাস্কিং ক্ষমতা, স্মার্ট লার্নিং ও লিডারশিপ স্কিল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পড়াশোনার প্রতি উৎসাহ সৃষ্টি, পরীক্ষাভীতি দূর করা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা অর্জন ইত্যাদিও এই প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত। সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস হবে এবং অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত ইন্টারঅ্যাকশন করে ছাত্র-ছাত্রীদের অগ্রগতির বিশ্লেষণ করা হবে।

অনুষ্ঠানের শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জন্মজয় চৌধুরী। তিনি জানান, ভবিষ্যতে শিলচর ছাড়াও কাছাড় ও বরাক উপত্যকার অন্যান্য অংশে এই প্রোগ্রাম বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামী দিনে এই কেন্দ্র বহু শিশুর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে—এই প্রত্যাশা সকলের।

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…