
বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর ১৯ মেঃবর্ষার শুরুতেই শিলচরের অন্যতম ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ জয়ন্তিয়া সড়ক কার্যত নরকে পরিণত হয়েছে। বরাক উপত্যকার সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য একমাত্র ভরসা এই সড়ক, আর সেই সড়কেই এখন গর্তের মিছিল। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন এই রাস্তায়। কিন্তু রাস্তার বর্তমান হাল দেখে মনে হয় যেন এক গভীর জঙ্গল পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
পিচঢালা রাস্তায় গর্ত, কোথাও কোথাও কাঁদামাখা জল, আর তারই মাঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল। এই চরম দুর্দশার মধ্যেও দীর্ঘদিন ধরে বরাকের জনপ্রতিনিধিরা কার্যত নিরব ভূমিকায় ছিলেন। জনসাধারণের অভিযোগ, বারবার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অবগত করা সত্ত্বেও কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে অবশেষে পরিস্থিতির চাপে নড়েচড়ে বসেছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তৃপক্ষ ও আসাম সরকারের মন্ত্রী কৌশিক রাই।

রবিবার, মন্ত্রী কৌশিক রাই নিজেই বড়খলা ও কাটিড়ার অন্তর্গত বাবুর বাজার-বিহাড়া এলাকার ক্ষতবিক্ষত রাস্তাগুলি পরিদর্শন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কাছাড় জেলার জেলা শাসক মৃদুল কুমার যাদব, বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার কুল্লু বরণ নাথ ও জেই জয়দীপ নাথ। পরিদর্শনকালে স্থানীয় বাসিন্দারা মন্ত্রীকে সরাসরি জানান রাস্তা নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। কালভার্ট তৈরিতে মানা হয়নি নির্দিষ্ট গাইডলাইন, আর কোথাও কোথাও জল নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাই নেই। স্থানীয়দের এই অভিযোগ শুনে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী কৌশিক রাই।
তিনি রীতিমতো ভর্ৎসনা করেন উপস্থিত বিভাগীয় কর্মকর্তাদের। নির্মাণ কাজে গাফিলতির জন্য দায়ী ঠিকাদারদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই বিভাগীয় আধিকারিকদের জবাবদিহি করতে বলেন—এই অনিয়ম কেন, কীভাবে ঘটল, কেন আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি! এদিকে, বিভাগীয় আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়েও উঠছে গুরুতর প্রশ্ন।

এলাকার মানুষ বলছেন, বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যার মুখে পড়লেও সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মকর্তারা কার্যত ঘুমিয়ে ছিলেন। সময়মতো দায়িত্ব পালন করলে আজ এই দুর্দশা হতো না। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছে সচেতন নাগরিক সমাজ। পরে বিহাড়া দেশবন্ধু ক্লাবে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে এক সভায় মিলিত হন মন্ত্রী। জনগণ স্পষ্ট ভাষায় জানান, তারা আর প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তব পরিবর্তন চান। রাস্তার এমন দুর্দশা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, কিন্তু বাস্তবিক সংস্কারের কোনো কাজই চোখে পড়েনি।
মন্ত্রী স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন এবং তাদের আশ্বস্ত করেন, যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, অসম মালা প্রকল্পের অধীনে বড়খলা থেকে কালাইন পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের কাজ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, যেখানে যেখানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এবং জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই, সেখানে কঠোর পর্যবেক্ষণ চালানো হবে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্ত্রী কৌশিক রাই জানান, বড়খলা থেকে কালাইন পর্যন্ত যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তা অসম মালা প্রকল্পের আওতায় দ্রুত এবং স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেসব এলাকায় জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই, সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। এবং যেসব জায়গায় নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে, সেখানেও কড়া নজরদারি চালানো হবে।

মন্ত্রীর এই মন্তব্যে কিছুটা আশার আলো দেখলেও, স্থানীয় জনগণ এখন বাস্তবিক কাজ শুরু হওয়ার প্রতীক্ষায়। দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত এই সড়ক অবশেষে যদি নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়, তবে শিলচরবাসীর জন্য তা হবে এক পরম স্বস্তির বিষয়। বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এখন এলাকাবাসীর মুখে মুখে। জনগণের প্রশ্ন এবার কি শুধু প্রতিশ্রুতি, না-কি আদতে কিছু হবে?