সন্ত্রাসবিরোধী বিদেশ সফরে বাদ গৌরব গগৈ, বিতর্কে হিমন্তর ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট

ভারতের সন্ত্রাস-বিরোধী অবস্থান এবং পাকিস্তানের আসল চেহারা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকার সাতটি সর্বদলীয় সাংসদ দলের বিদেশ সফরের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই কূটনৈতিক সফর ভারতের ইতিহাসে বৃহত্তম বলেই মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সরকার, সংসদ এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনের কাছে ভারতের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতির বার্তা পৌঁছে দেওয়াই এই সফরের মূল লক্ষ্য।

এই সফরের জন্য কংগ্রেসের পক্ষ থেকে চারজন সাংসদের নাম প্রস্তাব করা হয়— আনন্দ শর্মা, গৌরব গগৈ, সৈয়দ নাসির হোসেন ও রাজা ব্রার। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানান, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর অনুরোধেই রাহুল গান্ধী এই নামগুলি প্রস্তাব করেছিলেন। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় গৌরব গগৈর নাম অনুপস্থিত, যার ফলে নয়া বিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছে।

গৌরবের নাম বাদ পড়ার পেছনে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ‘অসমের এক সাংসদ অতীতে দুই সপ্তাহ পাকিস্তানে অবস্থান করেছেন। তাঁর স্ত্রী ভারতে কর্মরত অবস্থায় পাকিস্তানের একটি এনজিও থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন।’ যদিও ওই পোস্টে সরাসরি গৌরব গগৈর নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা একে গগৈর প্রতি ইঙ্গিত হিসেবেই দেখেছেন।

বস্তুত, কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা নিজের দলের সরকারের কাছে তদ্বির করার পাশাপাশি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে ‘দেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার প্রতি লক্ষ্য রেখে গৌরব গগৈর নাম দলের তালিকা থেকে সরানোর’ জন্য আবেদন করেছিলেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। অবশেষে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ইচ্ছাই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তুত করা তালিকায় প্রতিফলিত হলো।

লক্ষণীয় বিষয় হল, কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ শনিবার সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, সংসদীয় পরিক্রমা মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু কংগ্রেস দলের সভাপতি এবং বিরোধী দলপতিকে এমন কূটনৈতিক অভিযানের জন্য দলের প্রতিনিধি হিসেবে চারজন সাংসদের নাম প্রস্তাব করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

সে অনুযায়ী লোকসভার বিরোধী দলপতি রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের চারজন সাংসদের নাম কিরেণ রিজিজুকে জানিয়ে দেন বলেও জয়রাম রমেশ উল্লেখ করেছিলেন। সেই তালিকায় আনন্দ শর্মা, গৌরব গগৈ, সৈয়দ নাসির হোসেন এবং রাজা ব্রারের নাম ছিল। কিন্তু সরকারি তালিকায় কংগ্রেস দলের সাংসদ মনীষ তিওয়ারি, সলমান খুরশিদ, অমর সিংয়ের নাম রয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর শনিবারের পোস্টের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যদিও কংগ্রেস দল এবং গৌরব গগৈর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। অন্যদিকে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার অনুরোধ মেনে রাহুল গান্ধী গৌরব গগৈর নাম তালিকায় থেকে সরিয়ে নিয়েছেন কিনা, সেই বিষয়ে কংগ্রেস কোনও তথ্য জানায়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশিত তালিকায় গৌরব গগৈর নাম না থাকায় নতুন করে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

গৌরব গগৈর নাম তালিকায় নেই কেন, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং একজন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গৌরব গগৈর নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে কিনা, তাও এখনও অস্পষ্ট। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অথবা বিষয়টির তত্ত্বাবধানকারী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজুও এই প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি।

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিবৃতি অনুযায়ী, বিদেশে পাকিস্তানের স্বরূপ উন্মোচন করার জন্য মোট ৭টি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব কংগ্রেসের শশী থারুরকে দিয়েছে মোদি সরকার। বাকি ৬টি দলের নেতৃত্ব দেবেন যথাক্রমে বিজেপির রবিশংকর প্রসাদ, বৈজয়ন্ত পাণ্ডা, জেডিইউ-এর সঞ্জয়কুমার ঝা, ডিএমকে-এর কানিমোঝি, এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলে এবং শিবসেনার একনাথ সিন্ধে।

তাদের অধীনে একটি দলে ৮-৯ জন করে বিভিন্ন দলের সাংসদ রয়েছেন এবং প্রত্যেকটি দল পাঁচটি করে দেশ ভ্রমণ করে সরকারি ও বিরোধী দল এবং সাংসদদের কাছে সাম্প্রতিক পাক-ভারত সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান তুলে ধরবে। সর্বদলীয় এই সাতটি দল ২৩ মে বিভিন্ন দেশে যাত্রা করবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি বিশ্বজুড়ে ভারতের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক অভিযান হবে।

জানা গেছে, বৈজয়ন্ত পাণ্ডার নেতৃত্বে আটজন সাংসদ সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন এবং আলজেরিয়া ভ্রমণ করবেন। রবিশংকর প্রসাদের নেতৃত্বে আটজন ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালি এবং ডেনমার্ক ভ্রমণ করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের শক্তিশালী অবস্থান সম্পর্কে অবগত করবেন।

পাশাপাশি সঞ্জয়কুমার ঝার নেতৃত্বে ৯ জন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং সিঙ্গাপুর এবং একনাথ সিন্ধের নেতৃত্বে ৮ জন সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, লাইবেরিয়া, কঙ্গো এবং সিয়েরা লিওন ভ্রমণ করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের শক্তিশালী অবস্থান সম্পর্কে অবগত করবেন।

অন্যদিকে, শশী থারুরের নেতৃত্বে ৯ জন আমেরিকা, পানামা, গায়ানা, ব্রাজিল এবং কলম্বিয়া যাবেন। কানিমোঝির নেতৃত্বে ৮ জন স্পেন, গ্রিস, স্লোভেনিয়া, লাটভিয়া এবং রাশিয়া ভ্রমণ করবেন। সুপ্রিয়া চুলের নেতৃত্বে ৯ জন মিশর, কাতার, ইথিওপিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণ করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের শক্তিশালী অবস্থান সম্পর্কে অবগত করবেন। এই প্রতিনিধি দলে অসমের সাংসদ ভুবনেশ্বর কলিতা এবং প্ৰদান বরুয়া রয়েছেন।

Related Posts

শাসক দলের চাঁদাবাজ কয়লা, সুপারি চুন পাথর, সহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের রাজত্বে বরাক অশান্তির পথে: গৌরব গগৈর গুরুতর অভিযোগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন শিলচর, ৬ জুন: আসামের বন্যা বিধ্বস্ত বরাক উপত্যকা পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আর সরকারি ব্যর্থতার এক জ্বলন্ত নিদর্শনে। সফরের দ্বিতীয় দিনে আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি তথা…

ঈদের প্রাক্কালে অবৈধ গরুর বাজারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গো-রক্ষা বিভাগ

বরাকবাণী প্রতিবেদন,পাথারকান্দি,৬ জুন:  ঈদের প্রাক্কালে শ্রীভূমি জেলায় অবৈধ গরুর বাজার বন্ধের দাবিতে শ্রীভূমি জেলা আয়ুক্তের মারফৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরণ তথা রাজ্যের মীন,পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী  কৃষ্ণেন্দু পালের হাতে…