ভারতের বন্দর দিয়ে আর ঢুকবে না বাংলাদেশি পোশাক-খাবার! নয়াদিল্লির কড়া বার্তা ঢাকার উদ্দেশে

এই পণ্যগুলি ভারতীয় বন্দর দিয়ে আর কোনও ভাবেই দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে এখানেই শেষ নয়। আরও কিছু পণ্যের উপরেও কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। তালিকায় রয়েছে—ফলমূল, তুলা ও সুতির তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক এবং পিভিসি পণ্য, রঞ্জক জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি। এই জাতীয় পণ্যগুলি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির (যেমন: অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম) শুল্ককেন্দ্র দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি বন্দরও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে।

যদিও বাংলাদেশ থেকে আসা মাছ, এলপিজি গ্যাস ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর এখনও কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই বলে স্পষ্ট করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই পদক্ষেপ হঠাৎ আসেনি। এর আগে গত মাসেই ভারত বাংলাদেশকে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

অর্থাৎ, ভারত হয়ে তৃতীয় কোনও দেশে পণ্য রফতানির পথ আপাতত বন্ধ। তখন ভারত সরকার জানায়, বাংলাদেশ এই সুবিধার অপব্যবহার করছে, যার ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। তবে ভুটান ও নেপালের মতো বন্ধু রাষ্ট্রগুলির জন্য এখনও সেই ছাড় বহাল। সেখান থেকেই স্পষ্ট, ঢাকা নয়াদিল্লির কূটনৈতিক নজরে রয়েছে।

এই নির্দেশিকা এমন এক সময়ে এল, যখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে ক্ষমতায় এসেছেন মুহাম্মদ ইউনূস। হাসিনা জমানায় ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিট রুট নিয়ে বেশ অগ্রগতি হলেও, নতুন সরকারের সঙ্গে সেই আলোচনায় আর গতি দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি ইউনূস এক মন্তব্যে বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ যদি একত্রে কাজ করে, তা হলে সবাই লাভবান হবে। এই মন্তব্য ভালভাবে নেয়নি নয়াদিল্লি।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, ভারতীয় সার্বভৌমত্ব ও কৌশলগত নিরাপত্তার প্রশ্নে এমন মন্তব্য রাজনৈতিক বারুদের মতো কাজ করে। ফলত, এই নিষেধাজ্ঞা নিছক বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নয়, এর পেছনে রয়েছে স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা—বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেওয়া, সম্পর্কের সুতো কেবলমাত্র সুবিধার জায়গা থেকে টানা যায় না।

ভারতের এই ঘোষণার কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশও একটি কড়া পদক্ষেপ নেয়। তারা জানায়, স্থলপথে ভারতের তৈরি সুতো আমদানি আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। যদিও সমুদ্রপথে সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর নয়, তবুও এ নিয়ে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক যে চাপের মধ্যে, তা স্পষ্ট।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বরাবরই জটিল—একদিকে গভীর সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, অন্যদিকে কৌশলগত দ্বন্দ্ব। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা সেই টানাপোড়েনের নতুন অধ্যায় রচনা করল। এই পদক্ষেপ যে কেবলমাত্র অর্থনীতিক নয়, একধরনের কূটনৈতিক কড়া বার্তাও, তা বলাই যায়। এখন দেখার, এই নিষেধাজ্ঞার জবাবে ঢাকা কী রকম কৌশল নেয়, আর আগামী দিনে দুই দেশের সম্পর্ক কোন পথে এগোয়।

Related Posts

বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির বিরোধ চরমে, জুলাই আন্দোলনেও ভাঙন, সমাধানের আশায় জাতীয় নির্বাচনের দাবি জোরালো

তৌফিক আহমেদ তফছির,ঢাকা,২৪ মে: বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে নানা সময়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দেখা গেছে। যতই দিন যাচ্ছে, দ্বন্দ্ব যেন ক্রমশ…

পাকিস্তানি নারীকে বিয়ে করে চাকরি হারালেন সিআরপিএফ জওয়ান, ন্যায়ের আশায় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারে মুনীর আহমেদ

নয়াদিল্লি ৫ মেঃ ভালোবেসে এক পাকিস্তানি নারীকে বিয়ে করেছিলেন, আর সেই ভালোবাসার মূল্য দিতে হল নিজের চাকরি হারিয়ে। ঘটনাটি এখন দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স -এর ৪১ নম্বর ব্যাটালিয়নের…