
নয়াদিল্লি ৫ মেঃ ভালোবেসে এক পাকিস্তানি নারীকে বিয়ে করেছিলেন, আর সেই ভালোবাসার মূল্য দিতে হল নিজের চাকরি হারিয়ে। ঘটনাটি এখন দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স -এর ৪১ নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল মুনীর আহমেদকে সম্প্রতি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ— তিনি গোপনে পাকিস্তানি নাগরিক মিনাল খানকে বিয়ে করেন এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাঁকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছিলেন। এই ঘটনাকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করে কনস্টেবল মুনীরকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৪ মে ভিডিও কলে বিয়ে করেন মুনীর আহমেদ ও পাকিস্তানি নাগরিক মিনাল খান।
প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে অনলাইনের মাধ্যমে, আর তারপরই বিয়ের সিদ্ধান্ত। মুনীর দাবি করেন, এই বিয়ের কথা তিনি অক্টোবর মাসেই সিআরপিএফ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিনাল খান ওয়াঘা-অটারি সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং স্বামীর সঙ্গে একত্রে বসবাস শুরু করেন।
তবে মার্চ মাসে মিনালের ভিসার ১৫ দিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর মুনীর তার স্ত্রীর জন্য দীর্ঘমেয়াদী ভিসার আবেদন করেন। ঠিক এই সময়েই কাশ্মীরের পহেলগাম এলাকায় জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যু ঘটে। ওই ঘটনার পর ভারত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রতি কড়া অবস্থান গ্রহণ করে।
এরই জেরে মিনাল খানকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি সীমান্তে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্ট মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাকে আরও ১০ দিন ভারতে থাকার অনুমতি দেয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত শনিবার মুনীর আহমেদকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে সিআরপিএফ।
বাহিনীর মুখপাত্র উপ-মহাপরিদর্শক এম ধীনকরণ বলেন, কনস্টেবল মুনীর আহমেদ গোপনে একজন পাকিস্তানি নাগরিককে বিয়ে করেছেন এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাঁকে আশ্রয় দিয়েছেন। এটি পরিষেবার নিয়ম লঙ্ঘন এবং জাতীয় নিরাপত্তার পরিপন্থী। এই মর্মে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
রবিবার মুনীর আহমেদ সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, আমি সব কাগজপত্র নিয়ম মেনেই জমা দিয়েছিলাম। আমি কর্তৃপক্ষকে বিয়ের বিষয়ে জানিয়েছি। আমার হাতে সমস্ত প্রমাণ আছে। আমি কোনো ভুল করিনি। তিনি আরও জানান, “ন্যায়বিচারের আশায় আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছি।
আমি শুধু একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ন্যায় চাই। ভালোবেসে বিয়ে করা কি অপরাধ? এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমাজের একাংশ সহানুভূতির চোখে দেখছে মুনীরের দিকে, আবার অন্য একাংশ জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে বাহিনীর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছে।
প্রশ্ন উঠছে, ব্যক্তিগত জীবন ও কর্তব্যের সীমারেখা কোথায়? এই মুহূর্তে মুনীর আহমেদ এবং মিনাল খানের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নির্ভর করছে আইনি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের উপর। তবে স্পষ্ট, এই ঘটনা দেশজুড়ে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, ভালোবাসার টানে সীমান্তের ব্যবধান পেরিয়ে আসা কি দেশদ্রোহিতা নাকি নিছক মানবিক সম্পর্ক?